একদা

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের কথা।

আমার এক বন্ধুর দাদা গেছে মাঠে। হাওয়া খেতে না। সেই সময় প্লাস্টিকের বদনা এবং ল্যাট্রিন কোনটাই ছিল না। এইজন্য তিনি পিতলের বদনা নিয়ে মাঠে গেছেন ''কাজ'' সারতে।

গ্রামটা সুন্দরবনের পাশে। হঠাৎ বাথরুম করার প্রাক্কালে তিনি দেখলেন, কাছকাছি একটা বাঘ উকিঁঝুকি মারছে। এই অবস্থায় পৃথিবীর যেকোনো মানুষ জ্ঞান হারিয়ে লাট খেয়ে পড়ে যেতো।

আমার বন্ধুর দাদা ভীষণ বিরক্ত হলেন। এই রকম একান্ত একটা ব্যক্তিগত সময়ে বাঘের উপস্থিতি তার মোটেও সহ্য হলো না। ক্রোধের চোটে তিনি বদনা ছুড়ে মারলেন বাঘের দিকে। নিখুঁত নিশানা। পিতলের বদনা গিয়ে লাগলো বাঘের মাথায়। ঘটনাস্থলেই বাঘের তাৎক্ষণিক মৃত‌্যু। পত্রিকার ভাষায়, গুরুতর আঘাতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে বাঘের অকাল মৃত্যু।

এই সত্যি গল্প কিনা, জানি না। তবে এটা ঠিক, বাঙালি বাঘ ভয় পায় না। বাঙালি সাপ ভয় পায় না। ঝড়, জলোচ্ছাস, পুলিশের টিয়ার গ্যাস, বোমা, হরতাল কোনো কিছুকেই বাঙালি তেমন ভয় পায় না। যতখানি ভয় পায় অংক, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ইংরেজি ইত্যাদি সাবজেক্টকে।

আমাদের সময়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় অংকের প্রশ্ন দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা ছিল নিয়মিত ঘটনা।

এর কারণ, আমাদের অধিকাংশ শিক্ষকরা অংক, বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোকে সহজে উপস্থাপন করতে পারেননি। ফলে শৈশবেই এইসব বিষয় নিয়ে আমাদের ভীতি ঢুকে গেছে।

তাই অংক পরীক্ষার দিন আমাদের জ্বর আসে। ফিজিক্স পরীক্ষার আগের রাতে আমাদের পেট নেমে যায়।

এর মধ্যে একটা মজার ভিডিও পেলাম। ''স্কুল অব এক্সসেলেন্স'' নামে একটা অনলাইন স্কুল খোলা হয়েছে। যাদের টার্গেট হচ্ছে কমেডির মাধ্যমে অংক এবং বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে তুলে ধরা।

তাদের ওয়েবসাইটে চমক হাসানের ''চমক জাগানিয়া'' একটা ভিডিও দেখলাম। গণিতের শূণ্য বিষয়টা এত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন, বলার বাইরে। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরবে। হাসি শেষ মনে হবে, আহ, অংক বিষয়টা এতো সহজ!!!!

আহা, শৈশবে কেন চমক হাসানকে পেলাম না।

তাহলে আমি অংক শিখে অ্যারোনোটিকাল ইনজিনিয়ার হতে পারতাম। আমার বাড়ি থাকতো, গাড়ি থাকতো, সুন্দরী বউ থাকতো। বসে বসে সুন্দরী মেয়েদের ছবি দেখে দীর্ঘশ্বাস লুকাতে হতো না।

হায় আপসোস, বিরাট আপসোস।


লেখক ঃ আসিফ ইনতায রাবি