Maths Test

Night before Maths Test - Amazingly funny and true ........

বেকার মানেই বাতিল নয়

ছেলে তখন বেকার হয়নি। বেকার হওয়ার পথে আর কি। জীবনে ঝড়ের ঘনঘটা। পকেটে খুচরো খাচরা মিলিয়ে বোধহয় পঞ্চাশটা টাকা থাকত। বন্ধুতো দুরে থাক। একটা মশাও বসত না গায়ে। পাড়ার অদুরে একটা চিপায় বইসা বিড়ি টানত। মোটা মানিব্যাগওয়ালা বন্ধুরা সাই সাই করে হোন্ডা চালিয়ে ক্রস করার সময় হাল্কা থামাত
- কিরে খবর কি
- আপাতত নাই
- গত সপ্তাহে কক্সবাজার গেছিলাম। তুই তো গেলিনা। যে মজা করছি। মালের উপর শুইয়া ছিলাম দোস্ত
মুচকি হাসত ছেলে। তুই তো গেলিনা? তারে বলাই হয়নাই যাওয়ার কথা। বাজেটে ফিটিং ছিলনা। একসময় এই বন্ধুদের বাজেট টা নিজের থেকে দিয়ে সম্মানজনক পর্যায়ে আনত যে ছেলে,সেদিন তারেই ফাপড়? কত রঙ্গ দেখাইল যে সাই..
ছেলের ইয়ার ফাইনাল একজামের সময়ের ঘটনা। ফরম ফিলাপের লাস্ট ডেট। কিন্তু টাকা নাই। ফোন দিল বন্ধুদের্। একেক জনের এক একটা অজুহাত
- দোস্ত আমার কাছে তো নাই
- এক হাজার!!! এত টাকা কই পামু দোস্ত
সে বন্ধুরাই বিকালে তার সামনে হাজার টাকার ভদকার বোতল খুলল। ছেলে সেদিনও হেসেছিল। ভদকা গিলবার টাকা আছে। কিন্তু বন্ধুর ফর্ম ফিলাপের জন্য দেয়ার মত টাকা নাই ...মাল মানুষের মৌলিক অধিকার
এরপর ছেলে পাশ কইরা করল আরেক পাপ। বেকার মানেই অভিশাপ। সকালটা শুরু হয় মায়ের খোটা শুনে। দিনটা পার হয় চাকরির বিজ্ঞাপনে। এরই মধ্যে বন্ধুরা অনেক এগিয়ে গেছে। পোষ্টে এবং পার্টে। অলটাইম ফর্মাল ড্রেস। ফোন দিল সেইরকম পাওয়ারফুল এক বন্ধুলে। ভাল কোম্পানিতে ভাল জবে
- দোস্ত দেখ না একটা জব
- দোস্ত জব তো দিতে পারি ,কিন্তু বুঝিসই তো দেয়া নেয়ার ব্যাপারটা
- মানে
- ওকে তোর জন্য কনসিডার্। পাচ লাখ দিলেই হইব
ফোনটা রাইখা ধ্যানে বসছিল ছেলে। আজকের এই রিয়াদ না একদিন পাচ টাকার বেনসন দুই টাকা তার থেকে নিয়া মিলাইত। আজ সে রিয়াদের ডিমান্ড পাচ লক্ষ?
এদিকে বন্ধুরা দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে গেল। এস্টাবলিশড টাই টুই পড়া কর্পোরেট ডুডদের পাশে ক্ষেত কুচকানো শার্টের বেকার ছেলেটাকে মানায়না। ওকে মাইনাস কইরা দে। কেমন লাগে? দুরে বইসা সব খবর পাইত ছেলে। জি এফ দের নিয়ে পার্টি থ্রো, সিলেট ভ্রমন। বেকার গ্রুপে সে একলাই রইল
কিন্তু দিন কি পাল্টায় না? পাল্টায়। আল্লাহ যারে মাথা দেয় ,তারে কে ঠেকায়। এক বিখ্যাত কোম্পানির সিইও ঠিকই চিনে নেয় রত্ন। এপোয়েন্টমেন্ট লেটার টা হাতে ধরিয়ে বলে
- বেকার মানেই বাতিল নয়। তুমি জয়েন কর্।
সেদিনের সে বেকার ছেলে আজ এলিয়নে চড়ে। সকালে মা নিজের হাতে ডিমটা তুলে দেয় প্লেটে। সদ্য কুচিভাঙ্গা পিটার ইংল্যান্ডের শার্টটা থেকে লোমানির সুগন্ধ বেরোয়। একদিন ফোন দেয় সে বন্ধু। ভদকার বোতল খুলেছিল যে
-দোস্ত আমার তো বিদেশ যাওয়া দরকার্। ফ্যামিলির অবস্থা খারাপ জানিসই তো। তুই যদি দুই লাখটা টাকা ধার দেস। আমি শোধ করে দেব দোস্ত
ছেলে সেদিনও মুচকি হাসে। সে সন্ধ্যায় দুই লক্ষ টাকার একটা চেক আর একটা শিভাস রিগ্যালের বোতল পৌছে যায় বন্ধুর ঠিকানায়। চিরকুটে ছোট্ট করে লেখা ,বেকার মানেই বাতিল নয়।
আরেকদিন ফোন দেয় সেই হাই পোষ্টের হ্যাডমওয়ালা বন্ধু। ভাগ্যের হেরফেরে দুর্নিতীতে ধরা খেয়ে আজ সে চাকরী হারিয়ে পথের ফকির
- দোস্ত তোর তো অনেক লিঙ্ক দেখ না একটা জব। ছোটখাট হলেই চলবে
- জব তো আছে। তবে বুঝিসি তো দেয়া নেয়ার ব্যাপার্।
- মানে দোস্ত
- আচ্ছা তুই দোস্ত মানুষ। তোর লাইগা কনসিডারেশন। এক কাপ চা খাওয়াইলেই চলবে
ফোনটা কেটে মুচকি হেসে অফিস থেকে বের হয় একদার বেকার ছেলে। দিস ইজ কলড সুইট রিভেঞ্জ...মুখের উপর হাইসা হাইসা থাপ্পড়
দিন সবারই আসে রে পাগলা। বেকার মানেই বাতিল নয়। এই শীত তোমাদের্। এই শীতে তোমরা শহরের কোণায় মাথা নিচু করে বসে থাকা যে ছেলেটাকে গ্যারবেজ ভেবে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছ , আসছে শীতে সে হ্যাডম হবে...

লেখক ঃ ওয়ারিশ আজাদ নাফি

A Man

Who is a MAN?
A man is a beautiful part of God's creation who starts compromising at a very tender age.
He sacrifices his chocolates for his sister.
He sacrifices his dreams for just a smile on his parents face.
He spends his entire pocket money on buying gifts for the lady he loves just to see her smiling.
He sacrifices his full youth for his wife & children by working late at night without any complain.
He builds their future by taking loans from banks & repaying them for lifetime.
He struggles a lot & still has to bear scolding from his mother, wife & boss.
His life finally ends up only by compromising for others' happiness.
If he goes out, then he's careless
If he stays at home, then he's a lazy
If he scolds children, then he's a monster
If he doesn't scold, then he's a irresponsible guy
If he stops wife from working, then he's an insecure guy
If he doesn't stops wife from working, then he's somebody who lives on wife's earnings.
If he listens to mom, then he's mama's boy
If he listens to wife, he's wife's slave
Respect every male in your life. U will never know what he has sacrificed for you. Worth sending to every man to make him smile & every woman to make her realize his worth!

একাত্তরের দিনগুলি

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন খালেদের সাথে রেণুর বিয়েটা ধুমধাম করে হয়েছিল। বিয়ের পরদিনই যুদ্ধের ডাক পেয়ে রনাঙ্গনে চলে যায় ক্যাপ্টেন খালেদ। যদিও প্রেমের বিয়ে না, তবে চিঠি চালাচালির মাধ্যমে এনগেজমেন্ট আর বিয়ের মাঝামাঝির তিনমাসে ভালোই প্রেম করেছে ওরা...
রেনুর মনে পড়ে বাসর রাতের কথা...
- আচ্ছা রেনু, তুমি কি কখনও প্রেম করেছ।
রেনু মুচকি হেসে বলল,
" হাঁ করেছি তো। "
খালেদের মুখটা কেমন বোকাবোকা হয়ে গেল। আর্মির লোক সে। জেনারেলের অর্ডার বুঝে। কিন্তু নারীর মন বুঝা তার চেয়ে কঠিন...
" তার মান... তার মানে, তুমি আমায় বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছ।" খালেদ... উত্তেজিত হলে তোতলানো তার অভ্যাস
" আচ্ছা, তুমি এতো গাধা কেন" -রেনু
" মানে আমি গাধা না। আর তুমি যার সাথে প্রেম করতে সে খুব চালাক ছিল। "
" না গো না। আমি তোমারই।"
" এই শুন... তুমি সবসময় চোখে কাজল দিবা"
" কেন"
" কাজল দিলে তোমায় সুচিত্রার মত লাগে..."
আচ্ছা তাই বুঝি,......... "
বৃদ্ধ শশুরকে নিয়ে থাকত রেণু। অগাস্টের ১৫ তারিখে প্রথম রাজাকারেরা তার বাসায় হানা দিয়ে তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করে। রেণু কিচ্ছু বলেনি। পরের সপ্তাহে আসবে বলে হুমকী দিয়ে চলে যায় রাজাকারেরা। অগাস্টের ২২ তারিখে রাজাকারেরা ক্যাপ্টেন খালদের স্ত্রী রেণুকে টর্চার সেলে নিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন আগে রেণু স্বামীর উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে পাঠায়। এরপর থেকে রেণুর আর খোজ পাওয়া যায়নি...
আখাউরা সেক্টর, মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প
অগাস্টের ২৫ তারিখ কুমিল্লা ফেরত সহযোদ্ধা টিপু মারফত ক্যাপ্টেন খালেদ একটা চিঠি আর কিছু টাকা পায়। রেণুর চিঠি।
টিপুকে বিদায় দিয়ে কাঁপা হাতে চিঠিটা খুলল খালেদ। সুন্দর গোটা গোটা অক্ষরে লিখে রেনু
প্রিয় খালেদ
কেমন আছ। আশা করি ভাল। তোমার চিঠিটা পেয়েছিলাম। বাবা আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছেন। খালেদ কিছু কথা তোমায় বলা হয়নি। সেদিন রাতে প্রশ্ন করেছিলে, আমি কাউকে ভালবেসেছিলাম কিনা?এড়িয়ে গিয়েছিলাম প্রশ্নটা।আজ মনে হল প্রশ্নটার জবাব না দিলে আমি অশুচি রয়ে যাব। হাঁ, কলেজ লাইফে একজন কে ভালোবেসেছিলাম। আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। কবিতা লিখত। কবিতা শুনিয়ে অল্পবয়সী রেনুকে পাগল করে দিয়েছিলেন। অনেক স্বপ্ন দেখানোর পর একদিন জানতে পারি, ওনার একটা বিয়ে হয়েছে আগে। গোপনে। সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আর কোনদিন কোন পুরুষ কে ঘিরে স্বপ্ন দেখব না। কিন্তু এরপর তোমার সাথে কথা হল। চিঠিতে। বুঝলাম মেয়ে সম্পর্কে তোমার ধারণা কম। আমি এমনটাই চেয়েছিলাম, একতাল কাঁদা... যা দিয়ে একটা ঘর বানানো যায়। গতকাল রাজাকার মোবারক আর তিন পাক মেজর এসেছিল বাসায়। আমাকে নানা প্রশ্ন করেছিল। তুমি কোথায় আছ, তোমাদের ক্যাম্প কোথায়, তুমি বাড়িতে আসো কিনা। মনে হয় ওরা কিছু সন্দেহ করছে। আমি জানি ওরা আবার আসবে। বাবার জন্য চিন্তা কোরনা। বাবার দুই মাসের ঔষধ কিনে রেখেছি। কাজল ফুফু রেধে দিবেন রোজ। আমাকে হয়ত ইন্টারোগেট করার জন্য ওরা ধরে নিয়ে যেতে পারে। চিন্তা কোরনা। কিছু বলব না। মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর সম্মানটা রাখব, যতই কস্ট দেক। স্বামী হিসেবে মাত্র একটা রাত তোমায় পাশে পেয়েছি। কিন্তু বিশ্বাস কর,সেই রাতটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত ছিল। সাথে কিছু টাকা পাঠালাম। আমার স্কলারশিপের টাকা। সংকোচ বোধ কোরনা নিতে। তোমার ফেরার অপেক্ষায় রইলাম।
ইতি তোমার
রেনু
রেনুর জন্য বুকটা হু হু করে ঊঠক খালেদের্। স্বাধীনতা তুমি, ভালোবাসার বলি নিয়ে সুর্য ওঠাও
পরিশেষঃ ডিসেম্বরের ৪ তারিখে বিখ্যাত আখাউড়ার যুদ্ধে , হানাদার বাহিনীর গুলিতে আরো দুই সহযোদ্ধাসহ ক্যাপ্টেন খালেদ নিহত হন। ডিসেম্বরের ৮ তারিখে কুমিল্লা মুক্ত হওয়ার পর, পাকবাহিনীর ক্যাম্পের পেছনে মুক্তিযোদ্ধারা একজন নারীর গলিত লাশ খুজে পায়। পচা লাশ শেয়াল কুকুরে খেয়ে ফেলেছিল অর্ধেক। তবে হাতের আংটি সনাক্ত করে বোঝা যায়, সেটা ক্যাপ্টেন খালেদের স্ত্রী রেণুর লাশ...

লেখক ঃ ওয়ারিশ আজাদ নাফি

The Place of Paradise

If you want to touch cloud than lets go nilgiri,Bandarban.

তাঁর দরকার ‘লিভ টুগেদার’

রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে দুটো বটগাছ ছিল। আমরা সেই বটগাছের নিচে অনুষ্ঠান করতাম, অ্যাসেমব্লি করতাম, খেলতাম ও আড্ডা দিতাম। মাথার ওপরে ছিল পাখিদের অভয়নগর। তারা লাল লাল ফল খেত আর সেসবই একটু পরে বের করে দিত শরীর থেকে। আমরা মাথায় হাত বুলাতাম, গুঁড়ো গুঁড়ো বটের লাল ফল মাথা থেকে ঝরে পড়ত।
এমনি একদিন খেলার শেষে মাঠে বটগাছের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছি। আমাদের বন্ধু তাহের আলী বলল, ‘সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি রে, কখন কী ভুল হয়া যায়।’
‘কী ভুল করেছ তুমি, তাহের আলী?’
তাহের আলী বলল, ‘শোনো, ঢাকা গেছি। বড়লোক আত্মীয়র বাড়ি উঠেছি। বাথরুমে গেছি। বালতির অর্ধেকটা ভরা। বালতির পানি ঢেলে দিলাম কমোডে। তখন দেখি, বালতির পানিতে লুঙ্গি ভেজানো ছিল। সেই লুঙ্গির অর্ধেকটা চলে গেছে পাইপের ভেতর। অর্ধেকটা বাইরে। এখন না পারি ঢোকাতে, না পারি বের করতে।’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল তাহের আলী—‘সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি রে, কখন কী ভুল হয়া যায়!’
তারপর রংপুর থেকে আমিও এলাম ঢাকায়।
ভোরের কাগজ-এ চাকরি করতে গিয়ে একজন সহকর্মী পেলাম। তাঁর নাম শাহানা হুদা রঞ্জনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাস করেছেন। দারুণ রসিক। কথায় কথায় জানতে পারলাম, রঞ্জনার বাড়িও রংপুর। এবং তাঁর একজন কাজিন আছে, নাম তাহের আলী। শুনে আমি হাসতে হাসতে বাঁচি না। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি রে, কখন কী ভুল হয়া যায়।
‘আপনিই সেই বড়লোক আত্মীয়, রঞ্জনা!’
রঞ্জনা আর সুমনা শারমীন ছোটবেলার বন্ধু। তাঁরা তখন গল্প করতে শুরু করেন। শোনেন, ‘আমরা কী রকম বড়লোক ছিলাম।’
রঞ্জনার বাবা তখন ঢাকায় একটা ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক।
রঞ্জনা আর সুমনা থাকেন আসাদ গেট কলোনিতে, পড়তে যান ধানমন্ডি ও আজিমপুরের দুটো স্কুলে। তাঁরা যান বাসে চড়ে।
তখন একজন আরেকজনকে বলছেন, ‘দোয়া কর, যেন এত বড়লোক হতে পারি, যেন প্রতিদিন রিকশায় চড়ে চলাচল করতে পারি।’
শুনে দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক রঞ্জনার বাবা বলেছিলেন, ‘কোনো কিছু আশা করলে বড় আশা করো। দোয়া করো, যেন তোমরা প্রতিদিন মোটরসাইকেলে চড়তে পার।’
রঞ্জনা হাসেন। ‘বোঝেন, আমরা কী রকম বড়লোক ছিলাম।’
এখন তাহলে আমার আর তাহের আলীর কথা ভাবুন। আমাদের কাছে তো রঞ্জনারাই বড়লোক।
রঞ্জনার গল্প কেন মনে এল? সম্প্রতি আমাদের আরেক কবিবন্ধু জুয়েল মাজহার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন:
“বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষিকার ইংরেজি মান!!!
এটা একটি নামীদামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকার ১৮ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে দেওয়া স্ট্যাটাস:
‘Every year I am forgeted my birthday but my son, he is not forgeted. 19 October he give me. Birthday gift. Jear. Melaire brand watch. Feeling happiness.’
আমাদের মেধাবী বাচ্চাদের তাহলে কেন দোষ দিই? ওদের যা পড়ানো হবে তা-ই তো ওরা শিখবে। তাহলে আমাদের শিশুরা কিছু না পারলে তার দায়টা তো আমাদের বড়দেরই নাকি? ফুটনোট: তিনি ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষিকা নন।”
এই স্ট্যাটাস পড়ে আমি একটা মন্তব্য লিখেছিলাম— অনেকটা আঁতেল মার্কা মন্তব্য:
‘আমাদের ইংরেজির অবস্থা খারাপ। তার মানে এই না যে আমাদের বাংলার অবস্থা ভালো। বাংলায় একটা নির্ভুল চিঠি লেখার ক্ষমতা আমাদের বেশির ভাগেরই নেই। কেউ ভুল বাংলা লিখলে আমরা সেটা নিয়ে লজ্জা পাই না। কিন্তু ইংরেজি ভুল করলে আমরা খুব লজ্জা পাই। এটার কারণ কি ঔপনিবেশিক মানস? আসলে কেউ কেউ থাকেন, বানান-প্রতিবন্ধী। ভাষা-প্রতিবন্ধী। তিনি হয়তো তাঁর বিষয়ে খুব ভালো। খুব বড় বিজ্ঞানী বা চিকিৎসক বা খেলোয়াড়। কিন্তু বাংলা বা ইংরেজি লিখতে পারেন না। এটা নিয়ে হাসাহাসি করা উচিত নয়।’
কথাটা বললাম বটে, কিন্তু আমাদের শিক্ষার দৈন্য নিয়ে দুর্ভাবনা তাতে কমে না। যিনি ভাষা-প্রতিবন্ধী, তিনি কেন শিক্ষকতা করবেন?
রঞ্জনা আমাদের একটা গল্প শুনিয়েছেন। আমি বিশদ বর্ণনা দেব না। আমি গল্পের চরিত্রের পরিচয় গোপন রাখতে চাই।
তাঁদের একজন সাবেক সহকর্মী বলছেন, ‘খুলনার সার্কিট হাউসের ডিপোজিটেই আমাদের বাড়ি।’
‘ডিপোজিটে মানে?’
‘ডিপোজিটে মানে ডিপোজিটে। ঠিক ডিপোজিটেই আমাদের বাড়ি। সার্কিট হাউসের বারান্দা থেকেই দেখা যায়।’
একই ভদ্রলোক নাকি একবার আড্ডায় বলেছিলেন, ‘বহুদিন খাওয়াদাওয়া হয় না। হইচই হয় না। রঞ্জনা, আপনার বাড়িতে সবাইকে দাওয়াত দেন। এবার ‘লিভ টুগেদার’ করা দরকার।’
বলাবাহুল্য, ভদ্রলোক যথাক্রমে ‘অপজিট’ ও ‘গেট টুগেদার’ বলতে চেয়েছিলেন।
এই ভদ্রলোকই একবার তাঁদের অফিসের সবচেয়ে বড় কর্তার স্তুতি করছিলেন। বড় স্যার একটা ভালো কাজ করছেন। সবাই তাঁকে শ্রেণিমতো সাধ্যমতো ‘তেল’ দিচ্ছেন। ‘স্যার, আপনি যা করেছেন, এই রকম আর কেউ করেনি।’ ‘স্যার, আপনি একটা ভাবতে পারলেন, ভাবতে পারলেন আবার করতে পারলেন’... ‘আপনি স্যার সত্যিই মহান।’ এর মধ্যে আমাদের ডিপোজিট সাহেব বলে বসলেন, ‘স্যার, আপনি এত ভালো কাজ করেছেন, মনে হচ্ছে আপনাকে মমি করে রেখে দিই...’
এই গল্প শুনে আমরা হাসতে হাসতে বাঁচি না।
আমাদের কিন্তু একটা অবক্ষয় চলছে। শিল্প-সাহিত্য-শিক্ষা-চলচ্চিত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রে আমরা বেশ একটা অবক্ষয়ের কাল পার করছি। আমাদের শ্রেষ্ঠ মানুষগুলো একে একে চলে যাচ্ছেন। তাঁদের বিকল্প দেখছি না।
এই যে একটা শূন্যতা, তার পেছনে একটা কারণ কিন্তু ১৯৭১ সালে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা। তালিকা প্রস্তুত করে বাড়ি থেকে ধরে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হলো আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। সবচেয়ে মেধাবী, সবচেয়ে সৃজনশীল মানুষগুলোকে। মুনীর চৌধুরীর মতো নাট্যকার শিক্ষক আমরা আর পাব কই? শহীদুল্লা কায়সারের মতো লেখক আর সাংবাদিক? জহির রায়হানের মতো চলচ্চিত্রকার?
সেই যে শূন্যতা, সেই ক্ষতি, তার ধকল আজও আমাদের দিতে হচ্ছে।

আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

আমাদের গর্ব

আইনস্টাইন, নিউটন, স্টিফেন হকিং – এদের নিয়ে মাতামাতি করি, কিন্তু বাংলাদেশের বা পূর্ববঙ্গের গুণী সন্তানদের, প্রখ্যাত বিজ্ঞানীদের কথা কতটা মনে রাখি? এখনকার স্কুলের পাঠ্যবইতে এদের কথা কতোটা পড়ানো হয় জানিনা, কিন্তু আমার মনে হয়, দেশের প্রতিটি শিশুর জানা উচিৎ এসব বিজ্ঞানীর কথা, যাতে
তারা এঁদেরকে হিরো হিসাবে দেখতে শিখে ছোটবেলা হতে, আর বিজ্ঞানচর্চায় আরো আগ্রহী হয়।

- ফিঙ্গারপ্রিন্টিং এর আবিষ্কারক – কাজি আজিজুল হক (১৮৭২-১৯৩৫)। বাড়ি খুলনার ফুলতলী।

- প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (১৮৬১-১৯৪৪) – রসায়নবিদ, মারকুরিয়াস নাইট্রাইটের আবিষ্কারক। বাড়ি খুলনা।

- জগদীশ চন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭) – বেতার বা রেডিওর আসল আবিষ্কারক, গাছের প্রাণের ব্যাপারে বড় বড় সব আবিষ্কার করেছেন, বাড়ি মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর।

- প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ (১৮৯৩-১৯৭২) – পরিসংখ্যানে বহুল ব্যবহৃত মহলানবিশ ডিসট্যান্সের আবিষ্কারক, ইন্ডিয়ান ইন্স্টিটিউট অফ স্ট্যাটিস্টিক্স এর প্রতিষ্ঠাতা, বাড়ি মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুর।

- জামাল নজরুল ইসলাম (১৯৩৯-২০১৩), এস্ট্রোফিজিসিস্ট, বাড়ি ঝিনাইদহ।

- মেঘনাদ সাহা (১৮৯৩-১৯৫৬), পদার্থবিজ্ঞানের থার্মাল আয়নাইজেশনের সাহা ইকুয়েশনের আবিষ্কারক, বাড়ি ঢাকার শেওড়াতলী।

- অমল কুমার রায়চৌধুরী (১৯২৩-২০০৫), পদার্থবিজ্ঞানের আপেক্ষিক তত্ত্ব ও কসমোলজিতে বহুল ব্যবহৃত রায়চৌধুরী ইকুয়েশনের আবিষ্কারক, বাড়ি বরিশাল।

- মোহাম্মদ আতাউল করিম (১৯৫৩-), অপটিকাল ফিজিক্সের সেরা ৫০ জন বিজ্ঞানীর একজন, বাড়ি সিলেট।

- সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১৮৯৪-১৯৭৪), পদার্থবিজ্ঞানের বর্তমানে বহুল আলোচিত বোসন কণিকার নাম তাঁর নামানুসারে, তিনি আইনস্টাইনের সাথে মিলে বোস-আইনস্টাইন স্ট্যাটিস্টিক্স তত্ত্বের প্রণেতা। বাড়ি কোলকাতা হলেও তাঁর ক্যারিয়ার আর এই আবিষ্কার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগেই হয়েছে।

- আবুল হুসাম, আর্সেনিক দূরীকরণের জন্য সনো ফিল্টারের উদ্ভাবক, বাড়ি কুষ্টিয়া।
- মাকসুদুল আলম, পেঁপে, রাবার ও পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছেন, বাড়ি ফরিদপুর।

- শুভ রায়, কৃত্রিম কিডনির উদ্ভাবক, বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি।

- ফজলুর রহমান খান (১৯২৯-১৯৮২), বহুদিন ধরে বিশ্বের সবচেয়ে উচু ভবন সিয়ার্স টাওয়ার ও জন হ্যানকক টাওয়ারের ডিজাইনার, বহুতল ভবন নির্মানের নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবক, বাড়ি ঢাকা।

- শাহ এম ফারুক, কলেরার উপরে গুরুত্বপুর্ণ আবিষ্কার করেছেন, আইসিডিডিআরবিতে কর্মরত।

বাংলাভাষা পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২১)

ভাষার প্রকৃতির মধ্যে একটা গৃহিণীপনা আছে। নতুন শব্দ বানাবার সময় অনেক স্থলেই একই শব্দে কিছু মালমসলা যোগ ক'রে কিংবা দুটো-তিনটে শব্দ পাশাপাশি আঁট করে দিয়ে তাদের বিশেষ ব্যবহারে লাগিয়ে দেয়, নইলে তার ভাণ্ডারে জায়গা হত না। এই কাজে সংস্কৃত ভাষার নৈপুণ্য অসাধারণ। ব্যবস্থাবন্ধনের নিয়মে তার মতো সতর্কতা দেখা যায় না। বাংলা ভাষায় নিয়মের খবরদারি যথেষ্ট পাকা নয়, কিন্তু সেও কতকগুলো নির্মাণরীতি বানিয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলোকে সমাসের পর্যায়ে ফেলা যায়, যেমন : চটামেজাজ নাকিসুর তোলাউনুন ভোলামন। এগুলো হল বিশেষ্য-বিশেষণের জোড়। বিশেষণগুলোও ক্রিয়াপদকে প্রত্যয়ের শান দিয়ে বসানো। সেও একটা মিতব্যয়িতার কৌশল। বদমেজাজি ভালোমানুষি তিনমহলা, এগারোহাতি (শাড়ি) : এখানে জোড়া শব্দের শেষ অংশীদারের পিঠে ইকারের আকারের ছাপ লাগিয়ে দিয়ে তাকে এক শ্রেণীর বিশেষ্য থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে আর-এক শ্রেণীর বিশেষ্যে। অবশেষে সেই বিশেষ্যের গোড়ার দিকে বিশেষণ যোগ ক'রে তাকে বিশেষত্ব দিয়েছে। অবিকৃত বিশেষ্য-বিশেষণের মিলন ঘটানো হয়েছে সহজেই; তার দৃষ্টান্ত অনাবশ্যক। বিশেষ্যের সঙ্গে বিশেষ্য গেঁথে সংস্কৃত বহুব্রীহি মধ্যপদলোপী কর্মধারয়ের মতো এক-একটা বাক্যাংশকে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। যেমন "পুজোবাড়ি', অর্থাৎ পুজো হচ্ছে যে বাড়িতে সেই বাড়ি। কাঠাকয়লা : কাঠ পুড়িয়ে যে কয়লা হয় সেই কয়লা। হাঁটুজল : হাঁটু পর্যন্ত গভীর যে জল সেই জল। মাটকোঠা : মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছে যে কোঠা। দুই বিশেষণের যোগে যে সমাস তারও গ্রন্থি ছাড়িয়ে দিলে অর্থের ব্যাখ্যা বিস্তৃত হয়ে পড়ে; যেমন : কাঁচামিঠে : কাঁচা তবুও মিষ্টি। বাদশাহি-কুঁড়ে : বাদশার সমতুল্য তার কুঁড়েমি। সেয়ানা-বোকা : লোকটাকে বোকার মতো দেখায় কিন্তু আসলে সেয়ানা। বিশেষ্য এবং ক্রিয়া থেকে বিশেষণ-করা শব্দের যোগ, যেমন : পটলচেরা : অর্থাৎ পটল চিরলে যে গড়ন পাওয়া যায় সেই গড়নের। কাঠঠোকরা : কাঠে যে ঠোকর মারে। চুলচেরা : চুল চিরলে সে যত সূক্ষ্ম হয় তত সূক্ষ্ম।

কিন্তু শব্দরচনায় বাংলা আষার নিজের বিশেষত্ব আছে, তার আলোচনা করা যাক।

বাংলা ভঙ্গীওয়লা ভাষা। ভাবপ্রকাশের এরকম সাহিত্যিক রীতি অন্য কোনো ভাষায় আমার জানা নেই।

অর্থহীন ধ্বনিসমবায়ে শব্দরচনার দিকে এই ভাষায় যে ঝোঁক আছে তার আলোচনা পূর্বেই করেছি। আমাদের বোধশক্তি যে শব্দার্থজালে ধরা দিতে চায় না বাংলা ভাষা তাকে সেই অর্থেই বন্ধন থেকে ছাড়া দিতে কণ্ঠিত হয় নি, আভিধানিক শাসনকে লঙ্ঘন ক'রে সে বোবার প্রকাশ-প্রণালীকেও অঙ্গীকার করে নিয়েছে।

ধ্বন্যাত্মক শব্দগুলিতে তার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছি। পোকা কিল্‌বিল্‌ করছে : এ বাক্যের ভাবটা ছবিটা কোনো স্পষ্ট ভাষায় বলা যায় না। "খিট্‌খিটে' শব্দের প্রতিশব্দ ইংরেজিতে আছে; irritable, peevish, pettish; কিন্তু "খিট্‌খিটে' শব্দের মতো এমন তার জোর নেই। নেশায় চুর্‌চুর্‌ হওয়া, কট্‌মট্‌ ক'রে তাকানো, ধপাস্‌ ক'রে পড়া, পা টন্‌ টন্‌ করা, গা ম্যাজ্‌ ম্যাজ্‌ করা : ঠিক এ-সব শব্দের ভাব বোঝানো ধাতুপ্রত্যয়ওয়ালা ভাষার কর্ম নয়। ইংরেজিতে বলে creeping sensation, বাংলায় বলে "গা ছম্‌ছম্‌ করা'; আমার তো মনে হয় বাংলারই জিত। গুটিকয়েক রঙের বোধকে ধ্বনি দিয়ে প্রকাশ করায় বাংলা ভাষার একটা আকুতি দেখতে পাওয়া যায় : টুক্‌টুকে টক্‌টকে দগ্‌দগে লাল, ধব্‌ধবে ফ্যাক্‌ফেকে ফ্যাট্‌ফেটে সাদা, মিস্‌মিসে কুচকুচে কালো।

বাংলায় শব্দের দ্বিত্ব ঘটিয়ে যে ভাবপ্রকাশের রীতি আছে সেও একটা ইশারার ভঙ্গী, যেমন : টাটকা-টাটকা গরম-গরম শীত-শীত মেঘ-মেঘ জ্বর-জ্বর যাব-যাব উঠি-উঠি। অর্থের অসংগতি, অত্যুক্তি, রূপক-ব্যবহার, তাতেও প্রকাশ হয় ভঙ্গীর চাঞ্চল্য; অন্য ভাষাতেও আছে, কিন্তু বাংলায় আছে প্রচুর পরিমাণে।

আকাশ থেকে পড়া, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া, হাড় কালী করে দেওয়া, পিটিয়ে লম্বা করা, তেসে দেওয়া, গায়ে ফুঁ দিয়ে বেড়ানো, নাকে তেল দিয়ে ঘুমোনো, তেলে বেগুনে জ্বলা, পিত্তি জ্বলে যাওয়া, হাড়ে হাড়ে বজ্জাতি, ঘেন্না পিত্তি, বুদ্ধির ঢেঁকি, পাড়া মাথায় করা, তুলো ধুনে দেওয়া, ঘোল খাইয়ে দেওয়া, হেসে কুরুক্ষেত্র, হাসতে হাসতে পেটের নাড়ি ছেঁড়া, কিল খেয়ে কিল চুরি, আদায় কাঁচকলায় আহ্লাদে আটখানা : এমন বিস্তর আছে।

বাংলায় অনেক জোড়া শব্দ আছে যার এক অংশে অর্থ, অন্য অংশে নিরর্থকতা। তাতে করে অর্থের চারি দিকে একটা ঝাপসা পরিমণ্ডল সৃষ্টি করা হয়েছে; সেই জায়গাটাতে যা তা কল্পনা করবার উপায় থাকে।

আমরা বলি "ওষুধপত্র'। "ওষুধ' বলতে কী বোঝায় তা জানা আছে, কিন্তু "পত্রটা' যে কী তার সংজ্ঞা নির্ণয় করা অসম্ভব। ওটুকু অব্যক্তই রেখে দেওয়া হয়েছে, সুতরাং ওতে অনেক কিছুই বোঝাতে পারে। হয়তো ফীবার্‌মিক্‌শ্চারের সঙ্গে মকরধ্বজ, ডাক্তারের প্রেস্‌ক্রিপ্‌শন, থর্মমীটার, কুইনীনের বড়ি, হোমিয়োপ্যাথি ওষুধের বাক্স। হয়তো তাও নয়। হয়তো কেবলমাত্র দু বোতল ডি-গুপ্ত। এমনি "মালপত্র' "দলিলপত্র' বিছানাপত্র' প্রভৃতি শব্দে ব্যক্ত অব্যক্তের যুগলমিলন।

আর-একরকম জোড়মেলানো শব্দ আছে যেখানে দুই ভাগেরই এক মানে, কিংবা প্রায় সমান মানে; যেমন "লোকলস্কর'। এই "লস্কর' শব্দে সব জায়গাতেই যে ফৌজ বোঝাতেই তা নয়; প্রায় ওতে "লোক' শব্দের অর্থের সঙ্গে অনির্দিষ্ট লোকসঙ্ঘের ব্যাপকতা বোঝায়। অন্যরকম করে বলতে গেলে হয়ত বলতুম, হাজার হাজার লোক চলেছে; অথচ গুণে দেখলে হয়ত আড়াইশো'র বেশি লোক পাওয়া যেত না।

খুব "চড়চাপড়' লাগালে : ওর মধ্যে চড়টা সুনিশ্চিত, চাপড়টা অনিশ্চিত। ওটা কি তবে একবার গালে চড়, একবার পিঠে চাপড়। খুব সম্ভব তা নয়। তবে কি অনেকগুলো চড়। হতেও পারে।

মারাধরা মারধোর : বর্ণিত ঘটনায় শুধু হয়তো মারাই হয়েছিল কিন্তু ধরা হয়নি। কিন্তু "মারধোর' শব্দের দ্বারা মারটাকে সুনির্দিষ্ট সীমার বাইরে ব্যাপ্ত করা হল। যে উৎপাতটা ঘটেছিল তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলো এই শব্দে ইঙ্গিতের মধ্যে সেরে দেওয়া হয়েছে।

"কালিকিষ্টি' এটা একটা ভঙ্গীওয়ালা কথা। শুধু "কালো' বলে যখন মনে তৃপ্তি হয় না তখন তার সঙ্গে "কিষ্টি' যোগ করে কালিমাকে আরও অবজ্ঞায় ঘনিয়ে তোলা হয়।

ভাবনাচিন্তা আপদবিপদ কাটাছাঁটা হাঁকডাক শব্দে অর্থের বিস্তার করে। শুধু "চিন্তা' দুঃখজনক, কিন্তু "ভাবনাচিন্তা' বিচিত্র এবং দীর্ঘায়িত।

স্বতন্ত্র শব্দে "আপদ' কিংবা "বিপদ' বলতে যে বিশেষ ঘটনা বোঝায়, যুক্ত শব্দে ঠিক তা বোঝায় না। "আপদবিপদ' সমষ্টিগত, ওর মধ্যে অনির্দিষ্টভাবে নানাপ্রকার দুর্যোগের সম্ভাবনার সংকেত আছে।

"ধারধোর' শব্দে ধার কথার উপরেও আর কিছু অস্পষ্টভাবে উদ্‌বৃত্ত থাকে। হয়তো, কাউকে ধ'রে পড়া। রূপক অর্থে শুধু "ছাই' শব্দে তুচ্ছতা বোঝায় যথেষ্ট, এই অর্থে "ছাই' শব্দের ব্যবহার হয়ে থাকে, যেমন : কী ছাই বকছ। কিন্তু "ছাইভস্ম কী যে বকছ', এতে প্রলাপের বহর যেন বড়ো করে দেখানো হয়।

"হাঁড়িকুঁড়ি' শব্দ সংক্ষেপে পাকশালার বহুবিধ আয়োজনের ছবি এনে দেয়। এরকম স্থলে তন্নতন্ন বর্ণনার চেয়ে অস্পষ্ট বর্ণনার প্রভাব বেশি। "মামলা-মকদ্দমা' শব্দটা ব্রিটিশ আদালদের দীর্ঘপ্রলম্বিত বিপত্তির দ্বিপদী প্রতীক। এইজাতীয় শব্দের কতকগুলি নমুনা দেওয়া গেল : মাথামুণ্ডু মালমসলা গোনাগুন্তি চালচলন বাঁধাছাঁদা হাসিতামাশা বিয়েথাওয়া দেওয়াথোওয়া বেঁটেখাটো পাকাপোক্ত মায়াদয়া ছুটোছুটি কুটোকাটা কাঁটাখোঁচা ঘোরাফেরা নাচাকোঁদা জাঁকজমক গড়াপেটা জানাশোনা চাষাভুষো দাবিদাওয়া অদলবদল ছেলেপুলে নাতিপুতি।

৭ কার্তিক, ১৩৪৫ শান্তিনিকেতন

Smiling Bangladesh

From : Smiling Bangladesh
Photo Courtesy : Mr. Moniruzzaman

বাংলাভাষা পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০)

অব্যয়। বাংলা ভাষায় প্রশ্নসূচক অব্যয় সম্বন্ধে পূর্বেই আলোচনা করেছি।

প্রশ্নসূচক কি শব্দের অনুরূপ আর-একটি "কি' আছে, তাকে দীর্ঘস্বর দিয়ে লেখাই কর্তব্য। এ অব্যয় নয়, এ সর্বনাম। এ তার প্রকৃত অর্থের প্রয়োজন সেরে মাঝে মাঝে খোঁচা দেবার কাজে লাগে, যেমন : কী তোমার ছিরি, কী-যে তোমার বুদ্ধি।

তিনটি আছে যোজক অব্যয় শব্দ : এবং আর ও। "এবং' সংস্কৃত শব্দ। এর প্রকৃত অর্থ "এইমতো'। ইংরেজি The king marches with his elephants, horses and soldiers। The room is full of chairs, tables, clothes-racks and almirahs.

বাংলায় যদি বলি "রাস্তা দিয়ে চলেছে হাতি আর ঘোড়া', তা হলে বোঝাবে বিশেষ করে ওরাই চলেছে।

"আর' শব্দের আরও কয়েকটি কাজ আছে, যেমন : আর কত খাবে : অর্থাৎ অতিরিক্ত আরও কত খাবে। আর তোমার সঙ্গে দেখা হবে না : অর্থাৎ পুনশ্চ দেখা হবে না।

তোমাকে আর চালাকি করতে হবে না : এ একটা ভঙ্গীওয়ালা কথা। এই শব্দ থেকে "আর' শব্দটা বাদ দিলেও চলে, কিন্তু তাতে ঝাঁজ মরে যায়।

সাহিত্যে "ও' শব্দটা "এবং' শব্দের সমান পর্যায়ে চলেছে। কিন্তু চলতি ভাষায় "ও' সংস্কৃত "চ'এর মতো, যথা : আমি যাচ্ছি তুমিও যাবে, অ্যাঙ যায় ব্যাঙ যায় খল্‌সে বলে আমিও যাব।

এক কালে এই "ও' ছিল "হ' রূপে, যেমন : সেহ, এহ বাহ্য, এহ তো মানুষ নয়। এই "হ' অবিকৃত রূপে বাকি আছে সাধু ভাষায় "কেহ' শব্দে। চলতি ভাষায় "কেও' থেকে ক্রমে "কেউ' হয়েছে। পুরাতন সাহিত্যে "কেহু' পাওয়া যায়, "তেঁহ শব্দটা আজ হয়েছে "তিনি'। "ওহ' নেই কিন্তু সাধু ভাষায় "উহা' আছে। "যেহ' নেই, আছে "যাহা'। এই শেষ দুটি বিশেষণ অপ্রাণী সম্পর্কে।

যোজক "ও'র উৎপত্তি ফার্সি ঊঅ (অন্তস্থ ব) শব্দ থেকে, সুতরাং and'এর প্রতিশব্দরূপে এর ব্যবহার অবৈধ নয়। কিন্তু তবু ভাষায় ভালো করে মিশ খায় নি। তুমি ও আমি একসঙ্গেই যাব : এ খাঁটি বাংলা নয়। আমরা সহজে বলি : তুমি আমি একসঙ্গেই যাব। কেউ কেউ মনে করেন "অপি' থেকে "ও' হয়েছে, কিন্তু স্বরবিকারের নিয়ম অনুসারে সেটা সম্ভব কি না সন্দেহ করি।

রাজাও চলেছে সন্ন্যাসীও চলেছে : এ খাঁটি বাংলা। কিন্তু "রাজা ও সন্নাসী চলেছে' কানে ঠিক লাগে না। সে এগোয়ও না পিছোয়ও না : "ও' শব্দের এই যথার্থ ব্যবহার। সে এগোয় না ও পিছোয় না : এ বাক্যটা দুর্বল।

তুমিও যেমন, হবেও বা : এ-সব জায়গায় "ও' ভাষাভঙ্গীর সহায়তা করে।

দেখা যায় "এবং' শব্দটাকে দিয়ে আমরা অনেক স্থানে andশব্দের অনুকরণ করাই। He has a party of enemies and they vilify him in the newspapers এ বাক্যটা ইংরেজি মতে শুদ্ধ, কিন্তু আমরা যখন ওরই তর্জমা করে বলি "তাঁর একদল শত্রু আছে এবং ওরা খবরের কাগজে তাঁর নিন্দে করে', তখন বোঝা উচিত এটা বাংলারীতি নয়। আমরা এখানে "এবং' বাদ দিই। He has enemies and they are subsidised by the government এই বাক্যটা তর্জমা করবার সময় ফস্‌ করে বলা অসম্ভব নয় যে : তাঁর শত্রু আছে এবং তারা সরকারের বেতনভোগী। কিন্তু ওটা ঠিক হবে না, "এবং' পরিত্যাগ করতে হবে। বাক্যের এক অংশে "থাকা', আর-এক অংশে "হওয়া', এদের মাঝখানে "এবং মধ্যস্থতা করবার অধিকার রাখে না। তিনি হচ্ছেন পাকা জোচ্চোর, এবং তিনি নোট জাল করেন : ইংরেজিতে চলে, বাংলায় চলে না।

"সে দরিদ্র এবং সে মূর্খ' এ চলে, "সে চরকা কাটে এবং ধান ভেনে খায়' এও চলে। কারণ প্রথম বাক্যের দুই অংশই অস্তিত্ববাচক, শেষ বাক্যের দুই অংশই কর্তৃত্ববাচক। কিন্তু "সে দরিদ্র এবং সে ধান ভেনে খায়' এ ভালো বাংলা নয়। আমরা বলি : সে দরিদ্র, ধান ভেনে খায়। ইংরেজিতে অনায়াস বলা চলে : She is poor and lives by husking rice।

প্রয়োগবিশেষে "যে' সর্বনামশব্দ ধরে অব্যয়রূপ, যেমন : হরি যে গেল না। "যে' শব্দ "গেল না' ব্যাপারটা নির্দিষ্ট করে দিল। তিনি বললেন যে, আজই তাঁকে যেতে হবে : "তাঁকে যেতে হবে' বাক্যটাকে "যে' শব্দ যেন ঘের দিয়ে স্বতন্ত্র করে দিলে। শুধু উক্তি নয় ঘটনাবিশেষকেও নির্দিষ্ট করা তার কাজ, যেমন : মধু যে রোজ বিকেলে বেড়াতে যায় আমি জানতুম না। মধু বিকেলে বেড়াতে যায়, এই ব্যাপারটা "যে' শব্দের দ্বারা চিহ্নিত হল।

আর-একটা অব্যয় শব্দ আছে "ই'। "ও' শব্দটা মিলন জানায়, "ই' শব্দ জানায় সাতন্ত্র্য। "তুমিও যাবে', অর্থাৎ মিলিত হয়ে যাবে। "তুমিই যাবে', অর্থাৎ একলা যাবে। "সে যাবেই ঠিক করেছে', অর্থাৎ তার যাওয়াটাই একান্ত। "ও' দেয় জুড়ে, "ই' ছিঁড়ে আনে।

বক্রোক্তির কাজেও "ই'কে লাগানো হয়েছে : কী কাণ্ডই করলে, কী বাঁদরামিই শিখেছে। "কী শোভাই হয়েছে' ভালোভাবে বলা চলে, কিন্তু মন্দাভাবে বলা আরও চলে। এর সঙ্গে "টা' জুড়ে দিলে তীক্ষ্ণতা আরও বাড়ে, যেমন : কী ঠকানটাই ঠকিয়েছে। আমরা সোজা ভাষায় প্রশংসা করে থাকি : কী চমৎকার, কী সুন্দর। ওর সঙ্গে একটু-আধটু ভঙ্গিমা জুড়ে দিলেই হয়ে দাঁড়ায় বিদ্রূপ।

"তা' শব্দটা কোথাও সর্বনাম কোথাও অব্যয়। তুমি যে না বলে যাবে তা হবে না : এখানে না বলে যাওয়ার প্রতিনিধি হচ্ছে তা, অতএব "সর্বনাম'। তা, তুমি বরং গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ো : এই "তা' অব্যয় এবং অর্থহীন, না থাকলেও চলে। তবু মনে হয় একটুখানি ঠেলা দেবার জন্যে যেন প্রয়োজন আছে। তা, এক কাজ করলে হয় : একটা বিশেষ কাজের দিকটা ধরিয়ে দিল ঐ "তা'।

"বুঝি', সহজ অর্থ "বোধ করি'। অথচ বাংলা ভাষায় "বুঝি' "বোধ করি' "বোধ হচ্ছে' বললে সংশয়যুক্ত অনুমান বোঝায় : লোকটা বুঝি কালা, তুমি বুঝি কলকাতায় যাবে। "তুমি কি যাবে' এই বাক্যে "কি' অব্যয়ে সুস্পষ্ট প্রশ্ন। কিন্তু "তুমি বুঝি যাবে' এই প্রশ্নে যাবে কি না সন্দেহ করা হচ্ছে। বাংলা ভাষায় "বুঝি' শব্দে বুঝি ভাবটাকে অনিশ্চিত করে রাখে। বুঝির সঙ্গে "বা' জুড়ে দিলে তাতে অনুমানের সুরটা আরও প্রবল হয়।

যদি, যদি বা, যদিই বা, যদিও বা। যদি অন্যায় কর শান্তি পাবে : এটা একটা সাধারণ বাক্য। যদি বা অন্যায় ক'রে থাকি : এর মধ্যে একটু ফাঁক আছে, অর্থাৎ না করার সম্ভাবনা নেই-যে তা নয়। যদিই বা অন্যায় করে থাকি : অন্যায় করাটা নিশ্চিত বলে ধরে নিলেও আরও কিছু বলবার আছে। যদিও বা অন্যায় করে থাকি : অন্যায় সত্ত্বেও স্পর্ধা আছে মনে।

"তো' অব্যয়শব্দে অনেক স্থলে "তবু' বোঝায়, যেমন : বেলায় এলে তো খেলে না কেন। কিন্তু, তুমি তো বলেই খালাস, সে তো হেসেই অজ্ঞান, আমি তো ভালো মনে করেই তাকে ডেকেছিলুম, তুমি তো বেশ লোক, সে তো মস্ত পণ্ডিত-- এ-সব স্থলে "তো' শব্দে একটু ভর্ৎসনার বা বিস্ময়ের আভাস লাগে, যথা : তুমি তো গেলে না, সে তো বসেই রইল, তবে তো দেখছি মাটি হল।

"গো' শব্দের প্রয়োগ সম্বোধনে "তুমি' বর্গের মানুষ সম্বন্ধে, "তুই', বা "আপনি' বর্গের নয় : কেন গো, মশায় গো, কী গো, ওগো শুনে যাও, হাঁ গো তোমার হল কী। সংস্কৃত "ভোঃ' শব্দের মতো এর বহুল ব্যবহার নেই। হাঁ গো, না গো : মুখের কথায় চলে; মেয়েদের মুখেই বেশি। ভয় কিংবা ঘৃণা-প্রকাশে "মা গো'। "বাবা গো' শুধু ভয়-প্রকাশে। "শোনো' শব্দের প্রতি "গো' যোগ দিয়ে অনুরোধে মিনতির সুর লাগানো যায়। "কী গো' কেন গো' শব্দে বিদ্রূপ চলে : কেন গো, এত রাগ কেন; কেন গো, তোমার যে দেখি গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল; কী গো, এত রাগ কেন গো মশায়; কী গো, হল কী তোমার। ভয় বা দুঃখ-প্রকাশে মেয়েদের মুখে "কী হবে গো', কিংবা অনুনয়ে "একা ফেলে যেয়ো না গো'। "হাঁগা' কেনে গা' গ্রাম্য ভাষায়।

শুধু "হে' শব্দ আহ্বান অর্থে সাহিত্যেই আছে। মুখের কথায় চলে "ওহে'। কিংবা প্রশ্নের ভাবে : কে হে, কেন হে, কী হে। অনুজ্ঞায় "চলো হে'। মাননীয়দের সম্বন্ধে এই "ওহে'র ব্যবহার নেই। "তুমি' "তোমার' সঙ্গেই এর চল, "আপনি' বা "তুই' শব্দের সঙ্গে নয়।

"রে' শব্দ অসম্মানে কিংবা স্নেহপ্রকাশে : হাঁ রে, কেন রে, ওরে বেটা ভূত,ওরে হতভাগা, ওরে সর্বনেশে। এর সম্বন্ধ "তুই' "তোমা'র সঙ্গে।

"লো' "লা' মেয়েদের মুখের সম্বোধন। এও "তুই' শব্দের যোগে। ভদ্রমহল থেকে ক্রমশ এর চলন গেছে উঠে।

অব্যয় শব্দ আরও অনেক আছে, কিন্তু এইখানেই শেষ করা যাক।

৭ কার্তিক, ১৩৪৫ শান্তিনিকেতন

আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু এক একটা মোমবাতি

আরিফ ভাই,

ছোটবেলার প্রতিজ্ঞা থেকেই সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য একটা স্কুল করা ( নিজে ভুক্তভুগি ছিলাম বলেই হয়তো )

বিদেশে কাজ করে যা বেতন পাই, তা থেকেই টুকটুক করে চালাই এই প্রতিষ্ঠান... কারও কাছ থেকে বিন্দু মাত্র টাকা ডোনেশান নেয়নি... যা পেরেছি নিজেই করেছি

আর পারছি না

টাকা না হয় আমি সারাজীবন এই স্কুলের পিছে দিয়েই যাব কিন্তু, এই মুহূর্তে কিছু ভলান্টিয়ার না হলেই নয়

আমি দেশের বাইরে থেকে এটা এতদূর এনেছি ... আমি দেশে থাকলে হয়তো এভাবে আপনাকে বলতাম না

প্লিজ কিছু ভলান্টিয়ার জোগাড় করে দিন

আমাদের শাখা তিনটি- ঢাকা, চট্টগ্রাম আর নারায়ণগঞ্জ ... বর্তমান ছাত্র সংখ্যা ৫০০

আমরা অংক, ইংরেজি এবং বিজ্ঞানের ক্লাস নেই ... এটা কোন পরিপূর্ণ স্কুল না, বরঞ্চ ফ্রি কোচিং সেন্টারের মতোই... যেখানে গরীব ছাত্রদের রুটিন করে মৌলিক জ্ঞানের ভিত্তি করে দেয়া হয়। তাছাড়া, প্রতিমাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চলচিত্র দেখা, পরিছন্নতা শিক্ষা ... এসব তো আছেই

এছাড়া আছে তিনটি উন্মুক্ত পাঠাগার, যেখানে আছে প্রায় ৮০০০ বই (যে কেউ গিয়ে পড়তে পারে কোনরূপ মেম্বারসিপ ছাড়া)

পুরো কাজটি চালাতে আমাদের প্রধানত প্রতিদিন ১৫ জনের মতো স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক দরকার, দরকার আর কিছু ছাত্র উপদেষ্টা

নিজের আয় থেকেই টাকা দিয়ে ইনশাল্লাহ আমি সারাজীবন চালিয়েই যাব আমার এই বিদ্যানন্দ (Bidyanondo) স্কুলটা ... কিন্তু, এই মুহূর্তে কিছু ভলান্টিয়ার না হলেই নয়

একটু কি দেখবেন?

আপনার এক লেখনীতে হয়তো এই প্রতিষ্ঠানটির স্বেচ্ছাসেবক সমস্যাটি চিরতরে নাই হয়ে যাবে।

তাই আপনার দ্বারস্থ হলাম। আপনার সাহায্যের অপেক্ষায়।

ইতি

---

... তাকে কি উত্তর দিবো জানি না; বরং আসেন, তাকে উত্তরটা আমরা একসাথেই দেই

কারণ, আমরা প্রত্যেকেই কিন্তু এক একটা মোমবাতি

বাবা মা খরচ করে ম্যাচ কিনে আমাদের মাঝে আলো জ্বালিয়েছে

আমাদের আশেপাশে অনেক সুবিধাবঞ্চিত মোমবাতি আছে, যাদের বাবা-মা’রা হয়তো তাদের জ্বলে উঠার মত শিক্ষাটা দিতে পারছে না

আমি যদি আমার থেকে কিছু আলো, আমার পাশের বাসার সেই সুবিধা বঞ্চিত মোমবাতিটাকে দেই, তাহলে কিন্তু আমার এতটুকুনও ক্ষতি হবে না

হবে কি?

বা, তাতে আমি মোমবাতিটার আলো, কি একটুও কমবে?

লেখক ঃ আরিফ আর হোসাইন

বিদ্রোহী

বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারী' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর!
বল বীর-
বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'
চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'
ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া
খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,
উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!
মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!
বল বীর-
আমি চির-উন্নত শির! আমি চিরদুর্দম, দূর্বিনীত, নৃশংস,
মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি দূর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন!
আমি ধূর্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল-বৈশাখীর
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব-বিধাতৃর!
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির! আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণি,
আমি পথ-সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’।
আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ,
আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ।
আমি হাম্বীর, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল,
আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’
পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’
ফিং দিয়া দেই তিন দোল্‌;
আমি চপোলা-চপোল হিন্দোল।
আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা’,
করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা,
আমি উন্মাদ, আমি ঝঞ্ঝা!
আমি মহামারী, আমি ভীতি এ ধরীত্রির;
আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ণ চির অধীর।
বল বীর-
আমি চির-উন্নত শির! আমি চির-দূরন্ত দুর্মদ
আমি দূর্দম মম প্রাণের পেয়ালা হর্দম্‌ হ্যায় হর্দম্‌ ভরপুর্‌ মদ। আমি হোম-শিখা, আমি সাগ্নিক জমদগ্নি,
আমি যজ্ঞ, আমি পুরোহিত, আমি অগ্নি।
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান। আমি ঈন্দ্রাণী-সুত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য
মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তূর্য; আমি কৃষ্ণ-কন্ঠ, মন্থন-বিষ পিয়া ব্যথা বারিধির।
আমি ব্যোমকেশ, ধরি বন্ধন-হারা ধারা গঙ্গোত্রীর।
বল বীর-
চির-উন্নত মম শির! আমি সন্ন্যাসী, সুর সৈনিক,
আমি যুবরাজ, মম রাজবেশ ম্লান গৈরিক।
আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস,
আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ।
আমি বজ্র, আমি ঈষাণ-বিষানে ওঙ্কার,
আমি ইস্রাফিলের শৃঙ্গার মহা-হুঙ্কার,
আমি পিনাক-পাণির ডমরু ত্রিশুল, ধর্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র-মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচন্ড!
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র-শিষ্য,
আমি দাবানল-দাহ, দহন করিব বিশ্ব।
আমি প্রাণ-খোলা হাসি উল্লাস, -আমি সৃষ্টি-বৈরী মহাত্রাস
আমি মহাপ্রলয়ের দ্বাদশ রবির রাহু-গ্রাস!
আমি কভু প্রশান্ত, -কভু অশান্ত দারুণ স্বেচ্ছাচারী,
আমি অরুণ খুনের তরুণ, আমি বিধির দর্পহারী!
আমি প্রভঞ্জনের উচ্ছাস, আমি বারিধির মহাকল্লোল,
আমি উজ্জ্বল, আমি প্রোজ্জ্বল,
আমি উচ্ছল জল-ছল-ছল, চল ঊর্মির হিন্দোল-দোল!- আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেনী, তন্বী নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি! আমি উন্মন, মন-উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশীর।
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম-বেদনা, বিষ-জ্বালা, প্রিয় লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের
আমি অভিমানী চির ক্ষূব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যাথা সূনিবিড়,
চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর থর থর প্রথম পরশ কুমারীর!
আমি গোপন-প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল ক’রে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তাঁর কাঁকণ-চুড়ির কন্‌-কন্‌।
আমি চির শিশু, চির কিশোর,
আমি যৌবন-ভীতু পল্লীবালার আঁচর কাঁচুলি নিচোর!
আমি উত্তর-বায়ু মলয়-অনিল উদাস পূরবী হাওয়া,
আমি পথিক-কবির গভীর রাগিণী, বেণু-বীণে গান গাওয়া।
আমি আকুল নিদাঘ-তিয়াসা, আমি রৌদ্র-রুদ্র রবি
আমি মরু-নির্ঝর ঝর-ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়াছবি!
আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি, এ কি উন্মাদ আমি উন্মাদ!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ! আমি উত্থান, আমি পতন, আমি অচেতন চিতে চেতন,
আমি বিশ্বতোরণে বৈজয়ন্তী, মানব-বিজয়-কেতন।
ছুটি ঝড়ের মতন করতালী দিয়া
স্বর্গ মর্ত্য-করতলে,
তাজী বোর্‌রাক্‌ আর উচ্চৈঃশ্রবা বাহন আমার
হিম্মত-হ্রেষা হেঁকে চলে! আমি বসুধা-বক্ষে আগ্নেয়াদ্রী, বাড়ব বহ্নি, কালানল,
আমি পাতালে মাতাল, অগ্নি-পাথার-কলরোল-কল-কোলাহল!
আমি তড়িতে চড়িয়া, উড়ে চলি জোড় তুড়ি দিয়া দিয়া লম্ফ,
আমি ত্রাস সঞ্চারি’ ভুবনে সহসা, সঞ্চারি ভূমিকম্প। ধরি বাসুকির ফণা জাপটি’-
ধরি স্বর্গীয় দূত জিব্রাইলের আগুনের পাখা সাপটি’। আমি দেবশিশু, আমি চঞ্চল,
আমি ধৃষ্ট, আমি দাঁত দিয়া ছিঁড়ি বিশ্ব-মায়ের অঞ্চল!
আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা-সিন্ধু উতলা ঘুম্‌ঘুম্‌
ঘুম্‌ চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝ্‌ঝুম
মম বাঁশরীর তানে পাশরি’।
আমি শ্যামের হাতের বাঁশরী। আমি রুষে উঠে যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে সপ্ত নরক হাবিয়া দোযখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া! আমি শ্রাবণ-প্লাবন-বন্যা,
কভু ধরনীরে করি বরণীয়া, কভু বিপুল ধ্বংস ধন্যা-
আমি ছিনিয়া আনিব বিষ্ণু-বক্ষ হইতে যুগল কন্যা!
আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,
আমি ধূমকেতু জ্বালা, বিষধর কাল-ফণী!
আমি ছিন্নমস্তা চন্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি! আমি মৃন্ময়, আমি চিন্ময়,
আমি অজর অমর অক্ষয়, আমি অব্যয়!
আমি মানব দানব দেবতার ভয়,
বিশ্বের আমি চির-দুর্জয়,
জগদীশ্বর-ঈশ্বর আমি পুরুষোত্তম সত্য,
আমি তাথিয়া তাথিয়া মাথিয়া ফিরি স্বর্গ-পাতাল মর্ত্য!
আমি উন্মাদ, আমি উন্মাদ!!
আমি সহসা আমারে চিনেছি, আজিকে আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ!! আমি পরশুরামের কঠোর কুঠার,
নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি হল বলরাম স্কন্ধে,
আমি উপাড়ি' ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে। মহা- বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না -
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি আমি সেই দিন হব শান্ত!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন,
আমি স্রষ্টা-সূদন, শোক-তাপ-হানা খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব-ভিন্ন!
আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দেবো পদ-চিহ্ন!
আমি খেয়ালী বিধির বক্ষ করিব ভিন্ন! আমি চির-বিদ্রোহী বীর -
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!


কবি ঃ কাজী নজরুল ইসলাম


The Rebel


Say, Valiant,
Say: High is my head!

Looking at my head
Is cast down the great Himalayan peak!
Say, Valiant,
Say: Ripping apart the wide sky of the universe,
Leaving behind the moon, the sun, the planets
and the stars
Piercing the earth and the heavens,
Pushing through Almighty's sacred seat
Have I risen,
I, the perennial wonder of mother-earth!
The angry God shines on my forehead
Like some royal victory's gorgeous emblem.
Say, Valiant,
Ever high is my head!

I am irresponsible, cruel and arrogant,
I an the king of the great upheaval,
I am cyclone, I am destruction,
I am the great fear, the curse of the universe.
I have no mercy,
I grind all to pieces.
I am disorderly and lawless,
I trample under my feet all rules and discipline!
I am Durjati, I am the sudden tempest of ultimate summer,
I am the rebel, the rebel-son of mother-earth!
Say, Valiant,
Ever high is my head!

I am the hurricane, I am the cyclone
I destroy all that I found in the path!
I am the dance-intoxicated rhythm,
I dance at my own pleasure,
I am the unfettered joy of life!
I am Hambeer, I am Chhayanata, I am Hindole,
I am ever restless,
I caper and dance as I move!
I do whatever appeals to me, whenever I like,
I embrace the enemy and wrestle with death,
I am mad. I am the tornado!
I am pestilence, the great fear,
I am the death of all reigns of terror,
I am full of a warm restlessness for ever!
Say, Valiant,
Ever high is my head!

I am creation, I am destruction,
I am habitation, I am the grave-yard,
I am the end, the end of night!
I am the son of Indrani
With the moon in my head
And the sun on my temple
In one hand of mine is the tender flute
While in the other I hold the war bugle!
I am the Bedouin, I am the Chengis,
I salute none but me!
I am thunder,
I am Brahma's sound in the sky and on the earth,
I am the mighty roar of Israfil's bugle,
I am the great trident of Pinakpani,
I am the staff of the king of truth,
I am the Chakra and the great Shanka,
I am the mighty primordial shout!
I am Bishyamitra's pupil, Durbasha the furious,
I am the fury of the wild fire,
I burn to ashes this universe!
I am the gay laughter of the generous heart,
I am the enemy of creation, the mighty terror!
I am the eclipse of the twelve suns,
I herald the final destruction!
Sometimes I am quiet and serene,
I am in a frenzy at other times,
I am the new youth of dawn,
I crush under my feet the vain glory of the Almighty!

I am the fury of typhoon,
I am the tumultuous roar of the ocean,
I am ever effluent and bright,
I trippingly flow like the gaily warbling brook.
I am the maiden's dark glassy hair,
I am the spark of fire in her blazing eyes.
I am the tender love that lies
In the sixteen year old's heart,
I am the happy beyond measure!
I am the pining soul of the lovesick,
I am the bitter tears in the widow's heart,
i am the piteous sighs of the unlucky!
I am the pain and sorrow of all homeless sufferers,
i am the anguish of the insulted heart,
I am the burning pain and the madness of the jilted lover!

I am the unutterable grief,
I am the trembling first touch of the virgin,
I am the throbbing tenderness of her first stolen kiss.
I am the fleeting glace of the veiled beloved,
I am her constant surreptitious gaze.
I am the gay gripping young girl's love,
I am the jingling music of her bangles!
I am the eternal-child, the adolescent of all times,
I am the shy village maiden frightened by her own budding youth.
I am the soothing breeze of the south,
I am the pensive gale of the east.
I am the deep solemn song sung by the wondering bard,
I am the soft music played on his lyre!
I am the harsh unquenched mid-day thirst,
I am the fierce blazing sun,
I am the softly trilling desert spring,
I am the cool shadowy greenery!
Maddened with an intense joy I rush onward,
I am insane! I am insane!
Suddenly I have come to know myself,
All the false barriers have crumbled today!
I am the rising, I am the fall,
I am consciousness in the unconscious soul,
I am the flag of triumph at the gate of the world,
I am the glorious sign of man's victory,
Clapping my hands in exultation I rush like the hurricane,
Traversing the earth and the sky.
The mighty Borrak is the horse I ride.
It neighs impatiently, drunk with delight!
I am the burning volcano in the bosom of the earth,
I am the wild fire of the woods,
I am Hell's mad terrific sea of wrath!
I ride on the wings of the lightning with joy and profound,
I scatter misery and fear all around,
I bring earth-quakes on this world!

I am Orpheus's flute,
I bring sleep to the fevered world,
I make the heaving hells temple in fear and die.
I carry the message of revolt to the earth and the sky!
I am the mighty flood,
Sometimes I make the earth rich and fertile,
At another times I cause colossal damage.
I snatch from Bishnu's bosom the two girls!
I am injustice, I am the shooting star,
I am Saturn, I am the fire of the comet,
I am the poisonous asp!
I am Chandi the headless, I am ruinous Warlord,
Sitting in the burning pit of Hell
I smile as the innocent flower!
I am the cruel axe of Parsurama,
I shall kill warriors
And bring peace and harmony in the universe!
I am the plough on the shoulders of Balarama,
I shall uproot this miserable earth effortlessly and with ease,
And create a new universe of joy and peace.
Weary of struggles, I, the great rebel,
Shall rest in quiet only when I find
The sky and the air free of the piteous groans of the oppressed.
Only when the battle fields are cleared of jingling bloody sabres
Shall I, weary of struggles, rest in quiet,
I the great rebel.

I am the rebel eternal,
I raise my head beyond this world,
High, ever erect and alone!


Poet : Kazi Nazrul Islam
Translation: Kabir Chowdhury

বাংলাভাষা পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯)

ক্রিয়াপদে দু রকমের অনুজ্ঞা আছে। এক, উপস্থিত ব্যক্তিকে অনুরোধ বা আদেশ করা। আর, উপস্থিত বা অনুপস্থিত কারও সম্বন্ধে ইচ্ছা প্রকাশ করা, যেমন : "ও করুক'।

হোক যাক চলুক বা করুক প্রভৃতি শব্দগুলিতে ক প্রত্যয় পুরোনো ভাষায় সর্বত্র প্রচলিত ছিল না, যথা : জাউ, মন্দ পবন বহু, উদিত হউ চন্দা, মউরগণ নাদ করু।

পূর্বেই বলেছি বাংলা ভাষার প্রধান লক্ষণ, তার ভঙ্গীর প্রাবল্য। উপরোক্ত শ্রেণীর ক্রিয়াপদে একটা অনর্থক গে শব্দের যোগে যে ইঙ্গিত প্রকাশ করা হয় সেটা সহজ শব্দের দ্বারা হয় না, যথা : হোকগে করুকগে মরুকগে। এতে ঔদাসীন্যে ও ক্ষোভে জড়িয়ে যে ভাবটা ব্যক্ত করে সেটা অন্য ভাষায় সহজে বলা যায় না। কেননা গে শব্দের কোনো অর্থ নেই, ওটা একটা মুদ্রা। "হোকগে' শব্দের ইংরেজি তর্জমা করতে হলে বলতে হয় : Let it happen, I don't care। ওর সঙ্গে "তুমিও যেমন' যদি যোগ করা যায় তা হলে ভঙ্গিমা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। ইংরেজি বাক্যে হয়তো এর কাছাকাছি যায় : Oh let it be, don't bother। মোটের উপর এই শব্দভঙ্গীর ভাবখানা এই যে, যা হচ্ছে বা করা হচ্ছে সেটা ভালো নয়, সেটা ক্ষতিকর, বা অপ্রিয়, কিন্তু তবু ওটাকে গ্রাহ্য করার দরকার নেই। "মরুকগে' শব্দে এই ভাষাভঙ্গী খুবই স্পষ্ট হয়েছে। এই ছোট্ট বাংলা শব্দটির ইংরেজি প্রতিবাক্য : Hang it, let it go to the dogs।

ইংরেজিতে সাধারণ ব্যবহারের ক্রিয়াপদ অনুজ্ঞায় প্রায়ই এক মাত্রার হয়, যেমন, run stop cut beat shoot march hold throw। যেখানে যুগ্ম ক্রিয়াপদ ব্যবহার হয় সেখানে এক মাত্রার দুটি শব্দ জোড়া লাগে, যেমন : come in, go out, cut down, stand up, run on ইত্যাদি। বলা বাহুল্য, এইরূপ সংক্ষিপ্ত শব্দে আজ্ঞার জোর পৌঁছয়। স্কাউটের বা ফৌজের কুচকাওয়াজে ইংরেজিতে যে-সব আদেশবাক্য আছে এই কারণে সেগুলো জোরালো হয়। যে-সকল শব্দ ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয় তারা ধাক্কা দেয় জোরে। stand upশব্দ উভয়ে মিলে দুই মাত্রার বটে কিন্তু তাতে দুই ব্যঞ্জনবর্ণের দুটো ঠোকর আছে।

"দাঁড়াও' শব্দটাও দুই মাত্রার, কিন্তু তার আগাগোড়া স্বরবর্ণ, তাদের স্পর্শ মোলায়েম। কথাটা ধাঁ করে ছোটে না।

"তুই' "তোরা' বর্গের অনুজ্ঞায় এই দুর্বলতা নেই! বোস্‌ ওঠ্‌ ছোট্‌ থাম্‌ কাট্‌ মার্‌ ধর্‌ খেল্‌ : এগুলি দৌড়দার শব্দ। আদিকালে ভাষায় "তু' "তুই' ছিল একমাত্র মধ্যম-পুরুষের সর্বনাম শব্দ। সেটা যদি চলে আসত তা হলে ক্রিয়াপদকে স্বরবর্ণ এমন নরম করে রাখত না, হসন্ত ব্যঞ্জনবর্ণে তাকে তীক্ষ্ণতা দিত। "করো' হ'ত "কর্‌'। "কোরো' হ'ত "করিস'। "দাঁড়া' শব্দ যদিও স্বরবর্ণ বহন করে তবু "দাঁড়াও' শব্দের চেয়ে তার মধ্যে প্রভুশক্তি বেশি। "ঘুমো' আর "ঘুমোও' তুলনা করলে অনুজ্ঞার দিক থেকে প্রথমোক্তটির প্রবলতা মানতে হয়।

চলতি বাংলা ভঙ্গীপ্রধান ভাষা, তার একটা লক্ষণ ক্রিয়াপদের অনুজ্ঞায় অসংগত ভাবে "না' শব্দের ব্যবহার। এর কাজ হচ্ছে আদেশ বা অনুরোধকে অনুনয়ে নরম করে আনা।

"হোক না' "করোই না' ক্রিয়াপদে "না' শব্দে নির্বন্ধ প্রকাশ পায়, কোনো-এক পক্ষের অনিচ্ছাকে যেন ঠেলে দেওয়া। "না' শব্দের দ্বারা "হাঁ' প্রকাশ করা আর প্রথমপুরুষ-বাচক "আপনি'কে মধ্যমপুরুষের অর্থে ব্যবহার একই মনস্তত্ত্বমূলক। যিনি উপস্থিত আছেন যেন তিনি উপস্থিত নেই, তাঁর সঙ্গে মোকাবিলায় কথা বলার স্পর্ধা বক্তার পক্ষে সম্ভব নয়, এই ভাণের দ্বারাই তাঁর উপস্থিতির মূল্য যায় বেড়ে। তেমনি অনুরোধ জানানোর পরক্ষণেই "না' বলে তার প্রতিবাদ ক'রে অনুরোধের মধ্যে সম্মানের কাকুতি এনে দেওয়া হয়। "না' শব্দের ক্রিয়াপদের রূপ বাংলা ভাষার আর-একটি বিশেষত্ব, যথা : আমি নই, তুমি নও, সে নয়, তিনি নন, আমি নেই, তুমি নেই, সে নেই, তিনি নেই; হই নে, হও না, হয় না, হন না, হয় নি, হন নি।

বাংলা ক্রিয়াপদে নানারকম শব্দ-যোজনায় নানারকম ভঙ্গী। তার কতকগুলি সার্থক, কতকগুলি নিরর্থক। ক্রিয়াপদে এতরকম ইশারা বোধ হয় আর-কোনো ভাষায় নেই।

পড়ল বা, করলে বা, শব্দে আশঙ্কার সূচনা। কোনো ক্রিয়াবিশেষণ-যোগে এর ভাবটা প্রকাশ হতে পারত না।

এতে যদি ইকার যোগ করা যায় তাতে আর-একরকম ভঙ্গী এসে পড়ে। হলই বা, করলই বা : এর ভঙ্গীতে সুরের বৈচিত্র্য অনুসারে ক্ষমাও বোঝাতে পারে, স্পর্ধাও বোঝাতে পারে, উপেক্ষাও বোঝাতে পারে।

হল বুঝি, করল বুঝি, হল ব'লে, করল ব'লে : আসন্ন অপ্রিয়তার আশঙ্কা।

হল যে, করল যে : উদ্‌বেগ।

হল তো, করলে তো : অপ্রত্যাশিতের সম্বন্ধে বিস্ময়।

আবার ওকেই প্রশ্নের সুরে বদলিয়ে যদি বলা হয় "হল তো?' তা হলে জানানো হয় : এখন তো আর কোনো নালিশ রইল না?

হোক না, করুক না, হোক্‌গে, করুক্‌গে, মরুক্‌গে : ঔদাসীন্য।

হলই বা, করলই বা, নাই বা হল, নাহয় হল : স্পর্ধার ভাষা।

হবে বা, হবেও বা : দ্বিধা এবং স্বীকার মিশিয়ে।

হবেই হবে, করবেই করবে : সুনিশ্চিত প্রত্যাশা।

করতেই হবে, হতেই হবে, করাই চাই, হওয়াই চাই : ইচ্ছার জোর প্রয়োগ।

হলেই হল : অর্থাৎ হয় যদি তবে আর-কোনো তর্কের দরকার নেই।

হোকগে ছাই, মরুকগে ছাই : প্রবল ঔদাস্য।

৭ কার্তিক, ১৩৪৫ শান্তিনিকেতন

Bangladesh Liberation War-01

A thirteen minutes long documentary by the Liberation War, describing the havoc of 1971 war. The War For Bangladeshi Independence, 1971 ...

একদা

আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের কথা।

আমার এক বন্ধুর দাদা গেছে মাঠে। হাওয়া খেতে না। সেই সময় প্লাস্টিকের বদনা এবং ল্যাট্রিন কোনটাই ছিল না। এইজন্য তিনি পিতলের বদনা নিয়ে মাঠে গেছেন ''কাজ'' সারতে।

গ্রামটা সুন্দরবনের পাশে। হঠাৎ বাথরুম করার প্রাক্কালে তিনি দেখলেন, কাছকাছি একটা বাঘ উকিঁঝুকি মারছে। এই অবস্থায় পৃথিবীর যেকোনো মানুষ জ্ঞান হারিয়ে লাট খেয়ে পড়ে যেতো।

আমার বন্ধুর দাদা ভীষণ বিরক্ত হলেন। এই রকম একান্ত একটা ব্যক্তিগত সময়ে বাঘের উপস্থিতি তার মোটেও সহ্য হলো না। ক্রোধের চোটে তিনি বদনা ছুড়ে মারলেন বাঘের দিকে। নিখুঁত নিশানা। পিতলের বদনা গিয়ে লাগলো বাঘের মাথায়। ঘটনাস্থলেই বাঘের তাৎক্ষণিক মৃত‌্যু। পত্রিকার ভাষায়, গুরুতর আঘাতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে বাঘের অকাল মৃত্যু।

এই সত্যি গল্প কিনা, জানি না। তবে এটা ঠিক, বাঙালি বাঘ ভয় পায় না। বাঙালি সাপ ভয় পায় না। ঝড়, জলোচ্ছাস, পুলিশের টিয়ার গ্যাস, বোমা, হরতাল কোনো কিছুকেই বাঙালি তেমন ভয় পায় না। যতখানি ভয় পায় অংক, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ইংরেজি ইত্যাদি সাবজেক্টকে।

আমাদের সময়ে ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় অংকের প্রশ্ন দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলা ছিল নিয়মিত ঘটনা।

এর কারণ, আমাদের অধিকাংশ শিক্ষকরা অংক, বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলোকে সহজে উপস্থাপন করতে পারেননি। ফলে শৈশবেই এইসব বিষয় নিয়ে আমাদের ভীতি ঢুকে গেছে।

তাই অংক পরীক্ষার দিন আমাদের জ্বর আসে। ফিজিক্স পরীক্ষার আগের রাতে আমাদের পেট নেমে যায়।

এর মধ্যে একটা মজার ভিডিও পেলাম। ''স্কুল অব এক্সসেলেন্স'' নামে একটা অনলাইন স্কুল খোলা হয়েছে। যাদের টার্গেট হচ্ছে কমেডির মাধ্যমে অংক এবং বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে তুলে ধরা।

তাদের ওয়েবসাইটে চমক হাসানের ''চমক জাগানিয়া'' একটা ভিডিও দেখলাম। গণিতের শূণ্য বিষয়টা এত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন, বলার বাইরে। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরবে। হাসি শেষ মনে হবে, আহ, অংক বিষয়টা এতো সহজ!!!!

আহা, শৈশবে কেন চমক হাসানকে পেলাম না।

তাহলে আমি অংক শিখে অ্যারোনোটিকাল ইনজিনিয়ার হতে পারতাম। আমার বাড়ি থাকতো, গাড়ি থাকতো, সুন্দরী বউ থাকতো। বসে বসে সুন্দরী মেয়েদের ছবি দেখে দীর্ঘশ্বাস লুকাতে হতো না।

হায় আপসোস, বিরাট আপসোস।


লেখক ঃ আসিফ ইনতায রাবি

আমার বাবা মা..

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে আব্বা ফোন দিয়েছিলেন...

আমি বলেছিলাম ম্যাথ ছাড়া কিচ্ছুপারিনা...
আব্বা বলেছিলেন,
"আরে ধুর ব্যাটা,মন খারাপ করিস ক্যান???
বুয়েটে পড়া লাগবে কে বলেছে?? বাড়ির পাশেই তো রুয়েট।।
ভর্তি হ এখানেই।। বাপ বেটা একসাথে বাসে করে যাব।।"

আমার বাপ কতো কেয়ারলেস !!!!

আর মা আমার সব কিছুতেই খুশি....আমার মা খালি পাশ
করা কি জিনিস তা বুঝেন...এ প্লাস বুঝেন না...কারণ আমার
মা পড়ালিখা জানেন না...

আমার বাপ কেয়ারলেস,মা অশিক্ষিত...
তাও আমাদের ছয় ভাইবোনের আমি বাদে সবাই অলরেডি গ্র্যাজুয়েট...

আমি জীবনেও কোনদিন বৃত্তি বা ওই জাতীয় কিছু
পাইনি....তাও আমার বাপ-মা খুশি...নির্বিকা র...

আমি সত্যিই আমার বাপ মায়ের উপর গর্বিত...

তারা পড়ালিখাটাকে কোনদিন বোঝা করে তোলেননি...

আমার লিখাপড়া না জানা মায়ের উপর আমি গর্বিত যিনি পাশ
করলেই মাথায় হাতবুলিয়ে আরও ভালো করে পড়তে বলেন...

এরকম বাপমায়ের জন্য কারও অ্যাটলিস্ট কখনও আত্নহত্যা করা লাগে না...

কিছু প্রশ্ন

ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া এক ছেলে বিল গেটস এর কাছে চিঠি লিখছে-

DEAR SIR,
আমার কিছু প্রশ্ন আছে,

1.কীবোর্ডের লেটারগুলো এলোমেলো কেন??? কীবর্ডের এর সঠিক ভার্সন কবে আসবে??

2.আমরা MS-WORD ব্যবহার করি, MR.WORD কবে রিলিজ হবে???

3.কীবর্ডে ANY KEY নামে কোন বাটন নেই তারপর O কম্পিউটার এটা চায় কেন???
...
শেষ প্রশ্ন
4.আপনার নাম গেটস(GATES) আপনি উইন্ডোজ(WINDOWS) কেন বানান????

সৃজনশীল প্রশ্ন - ২

নতুন বউ গুটিসুটি মেরে খাটে বসে আছে। সারা দিন অনেক ধকল গেছে। তাই এখন খুব ক্লান্ত সে। তার পরেও মনের কোণে কোথায় যেন খেলা করছে ভীষণ আনন্দ। কেনই বা আনন্দিত হবে না? অনেক বছর অপেক্ষার পর সে তার রাজপুত্রের দেখা পেয়েছে। এটা কি কম খুশির কথা?
কিন্তু রাজপুত্র বাসরঘরে আসতে এত দেরি করছে কেন? কোনো সমস্যা হয়নি তো আবার? নতুন বউয়ের কপালে একটু দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল।
হঠাৎ কার পায়ের আওয়াজ! নতুন বউ লাজুক মুখ নিয়ে আড়চোখে দরজার দিকে তাকাল।
হ্যাঁ। ছোট ছোট পা ফেলে আসছে তার বর।
কিন্তু একি! বর তার পাশে এসে না বসে ঘরের এক কোনায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল কেন? কী হলো তার? তাকে এমন বিধ্বস্ত লাগছে কেন? সে কি কোনো কথা বলবে না?
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল বউ।
কিন্তু না, বর তখনো নীরব। শেষমেশ নতুন বউ লজ্জা ভেঙে নিজেই জিজ্ঞেস করে ফেলল, ‘এই যে! শুনছ? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?’
কোনো উত্তর এল না বরের কাছ থেকে।
বউ আবার জিজ্ঞেস করল, ‘কী ব্যাপার? কিছু বলো!’
গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল বর, ‘আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না।’
নতুন বউ ভয় পেয়ে গেল। কী ব্যাপার? বিয়ের রাতেই ঝগড়া! লক্ষণ তো ভালো ঠেকছে না!
বউ বলল, ‘মানে কী? প্লিজ, এমন না করে কিছু বলো। কী হয়েছে?’
আবার উত্তর দিল বর, ‘জীবনেও না। কোনো মন্তব্য করব না আমি।’
বউ এবার একটু রাগ করল, ‘কিন্তু কেন? আমার কী অপরাধ? কী করেছি আমি?’
বর এবার অন্যদিকে তাকিয়ে জবাব দিল, ‘এই বিয়ে হয় নাই।’
বউ হুংকার দিয়ে উঠল, ‘মানে? আমি নিজে কবুল বলেছি। তুমিও বলেছ। তাহলে বিয়ে হয় নাই মানে কী? উল্টাপাল্টা বলছ কেন?’
‘একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের বিয়ে হতে হবে। তা না হলে আমি বিয়ে মানি না। মানব না।’ নির্লিপ্ত কণ্ঠে বরের জবাব।

পরিশেষ
বাসররাতেই ওই বরকে পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দিয়ে বউ বাপের বাড়ি চলে গেছে। ভণ্ডদের সে বড় ঘৃণা করে।
এদিকে ওই বরের পরে আর বিয়ে হয়নি। ‘স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের’ বিয়ে আর বউ খুঁজতে খুঁজতেই তার যৌবন কেটে গেছে।

সৃজনশীল প্রশ্ন
ক) ওই বরের পরিচয় দাও।
খ) ‘স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের বিয়ে’ বলতে কী বোঝো?
গ) আলোচ্য অনুচ্ছেদে বরের শরম আছে বলে তুমি মনে করো কি? না থাকলে কেন নেই?


লেখক ঃ আলিম আল রাজি

অদ্ভুত আঁধার এক

অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই - প্রীতি নেই - করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব'লে মনে হয়
মহত্‍‌ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।

কবি ঃ জীবনানন্দ দাশ



An Overwhelming Night


These days on earth reigns an overwhelming night
Those who claim to see most have no eye sight
And to advance ahead the world awaits advice
From those who know no love, no pity but vice.

The fox and the vulture devour the hearts
Of those who have deep faith on humanity
Of those who think no queer of truth or arts
And of those who dream of a world of sanity.


Poet : Jibanananda Das
Translated : S M Maniruzzaman

বাংলাভাষা পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮)

হওয়া থাকা আর করা, এই তিন অবস্থাকে প্রকাশ করে ক্রিয়াপদে। আমি ধনী, তুমি পণ্ডিত-- এ কথা ইংরেজিতে বলতে গেলে এর সঙ্গে "হওয়া' ক্রিয়াপদ যোগ করতে হয়, বাংলায় সেটা ঊহ্য থাকে। "রাস্তাটা সোজা', "পুকুরটা গভীর', যখন বলি তখন সেটাতে তার নিত্য অবস্থা জানায়। কিন্তু "বর্ষায় পুকুর ঘোলা হয়েছে' এটা আকস্মিক অবস্থা, তাই হওয়ার কথাটা তুলতে হয়। ওর লোভ হয়েছে, মনে হচ্ছে ওর জ্বর হবে-- বাক্যগুলিও এইরকম।

সাবেক বাংলায় বিশেষ্য বা সর্বনাম শব্দ-সহযোগে ইংরেজি is ও are-এর অনুরূপ প্রয়োগ পাওয়া যায় : তুমি কে বটো, সে কে বটে, আমি রাজার ঝিয়ারি বটি। অচেতনবাচক শব্দেও চলত, যেমন : ঐ গাছটা কী বটে, এই নদী গঙ্গাই বটে। "বটে' শব্দটা এখনো ভাষায় আছে, বিশেষ ঝোঁক দেবার জন্যে, যেমন : লোকটা ধনী বটে। আবার ভঙ্গীর কাজেও লাগে, যেমন : বটে, চালাকি পেয়েছ! "বটে'র সঙ্গে "কিন্তু'র যোগ হলে ভঙ্গীটা আরও জমে, যেমন : উনি সর্দারি করেন বটে কিন্তু টের পাবেন। ইংরেজিতে স্বভাব বা অবস্থা বোঝাতে isবা are ব্যতীত বিশেষ্যের গতি নেই, বাংলায় না নয়। ইংরেজিতে বলাই চাই এন ভড় রতলন, কিন্তু বাংলায় যদি বলি "সে খোঁড়া বটে' তা হলে হয় বোঝাবে, তার খোঁড়া অবস্থাটা একটা বিশেষ আবিষ্কার, নয় ওর সঙ্গে একটা অসংগত ব্যাপারের যোগ আছে। যেমন : ও খোঁড়া বটে কিন্তু দৌড়য় খুব। কিংবা সন্দেহের বিদ্রূপ প্রকাশ করে : তুমি খোঁড়া বটে! অর্থাৎ, খোঁড়া নও যে তা প্রমাণ করতে পারি।

বাংলায় থাকার কথাটা যখন জানাই তখন বলি-- আছি বা আছে, ছিলে ছিল বা ছিলুম। "আছিল' শব্দেরই সংক্ষেপ "ছিল'। কিন্তু ভবিষ্যতের বেলায় হয় "থাকব'। বাংলায় ক্রিয়াপদের রূপ প্রধানত এই থাকার ভাবকে আশ্রয় করে। করেছে করছে করেছিল করছিল-- শব্দগুলো "আছি' ক্রিয়াপদেক ভিত্তি ক'রে স্থিতির অর্থকেই মুখ্য করেছে। সংস্কৃত ভাষায় এটা নেই, গৌড়ীয় ভাষায় আছে। হিন্দিতে বলে "চলা থা', চলেছিল। কাজটা যদিও চলা, তবু থা শব্দে বলা হচ্ছে, চলার অবস্থাতে স্থিতি করেছিল। গতিটা যেন স্থিতির উপরেই প্রতিষ্ঠিত।

যে কাজকে নির্দেশ করা হচ্ছে প্রধানত সেই কাজের মূল ধাতুকে দিয়েই ক্রিয়াপদের গড়ন। "খা' ধাতুতে খাওয়া বোঝায়, খাওয়া কাজের সমস্ত ক্রিয়ারূপ এই ধাতুর যোগেই তৈরি। কিন্তু বাংলা ভাষায় অনেকস্থলে কার্যটা ক্রিয়ার রূপ ধরে নি। ক্ষুধা পাওয়া, তৃষ্ণা পাওয়া, প্রতিদিনের ঘটনা; অথচ বাংলায় সেটা ক্রিয়ারূপ নেয় নি, বিশেষ্যের সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে বলতে হয় : ক্ষুধা পেল, তৃষ্ণা পেল। হওয়া উচিত ছিল ক্ষুধিল' "তৃষিল', কাব্যে এইরকম ক্রিয়ারূপের কোনো বাধা নেই। কিন্তু গদ্যবাংলায় ক্রিয়াপদকে অনেক স্থলে গোটা বিশেষ্যপদের ভার বয়ে বেড়াতে হয়।

বাংলায় দুটো ক্রিয়াপদ জুড়ে ক্রিয়াবিশেষণ গড়ার একটা রীতি আছে। তাতে যে ইঙ্গিতের ভাষা তৈরি হয়েছে তার ভাবপ্রকাশের শক্তি অসাধারণ। সামান্য এই কথাটা "রয়ে বসে কাজ করা' যা বলে তা কোনো বাঁধা সংস্কৃত শব্দে বলাই যায় না। "উঠেপ'ড়ে "উঠেহেঁটে' কিংবা "নেচেকুঁদে' বেড়ানোতে যে ফুর্তি প্রকাশ পায় সেটার ঠিক উপযুক্ত শব্দ অভিধানে খুঁজে পাওয়া যায় না। এদের স্বজাতীয় শব্দ : তেড়েফুঁড়ে কেটেছেঁটে বেঁচেবর্তে রয়েসয়ে হেসেখেলে। এমন আরও বিস্তর আছে। অনেক স্থলে ঐ জোড়া শব্দের দুটিতে অর্থের সাম্য থাকে না। বস্তুত ওগুলো শব্দযোজনার একরকম খেপামি। "বয়েছেয়ে দেখা'য় যা বলা হচ্ছে তার সঙ্গে বাওয়া এবং ছাওয়ার কোনো সম্পর্কই নেই। যখন বলি "নেড়েচেড়ে দেখতে হবে' তখন "নেড়ে' শব্দের সহচরটিকে ব্যবহার করা হয় অর্থহীন বাটখারার মতো ওজন ভারি করবার জন্যে। চেয়েচিন্তে কেঁদেকেটে : এরা আছে অনুপ্রাসের গাঁঠ বাঁধার কাজে। এঁটেসেঁটে খেটেখুটে খেয়েদেয়ে ঠেলেঠুলে : এরা ধ্বনির পুনরাবৃত্তিতে মনকে ঠেলে দেবার কাজ করে।

আর-একরকম ক্রিয়াবিশেষণ আছে ক্রিয়া পদকে দুনো করে নিয়ে। যেমন,"জ্বর হবে হবে' কিংবা "জ্বর জ্বর করছে'। মনটা "পালাই পালাই' করে। এর মধ্যে খানিকটা অনিশ্চয়তা অর্থাৎ হওয়ার কাছাকাছি ভাব আছে। "লড়াই লড়াই খেলা' সত্যিকার লড়াই নয় কিন্তু যেন লড়াই। "হতে হতে হল না' অর্থাৎ হতে গিয়ে হল না। এতে যেমন জোর কমায়, আবার কোনো স্থলে জোর বাড়ায় : দেখতে দেখতে জল বেড়ে গেল, হাতে হাতে ফল পাওয়া। সরে সরে যাওয়া, চলে চলে ক্লান্ত, কেঁদে কেঁদে চোখ লাল, পিছু পিছু চলা, কাছে কাছে থাকা : এই দ্বিত্বে নিরন্তরতার ভাব পাওয়া যায়, কিন্তু একটাকা নিরন্তরতা নয়, এর মধ্যে একটা বারংবারত্ব আছে। "পাতেপাতেই মাছের মুড়ো দেওয়া হয়েছে' বললে মনে হয় সেটা যেন একে একে পরে পরে গণনীয়। "পাথরটা পড়ি পড়ি করছে', কোনো কালেই হয়তো পড়বে না, কিন্তু প্রত্যেক মুহূর্তে বারে বারে তার ভাবখানা পড়বার মতো। "আপনি আপনিই তিনি বকে যাচ্ছেন' বললে কেবল যে স্বগত বকা বোঝায় তা নয়, বোঝায় পুনঃ পুনঃ বকা। এরকম ভাবব্যঞ্জনা কোনো স্পষ্টার্থক বিশেষণের দ্বারা সম্ভব নয়। এ যেন সিনেমায় ছবি নেওয়ার প্রণালীতে পুনঃ পুনঃ অনুভূতির সমষ্টি।

ক্রিয়ার বিশেষণে অর্থহীন ধ্বনি সম্বন্ধে "বাংলা শব্দতত্ত্ব' বইখানিতে অনেক দৃষ্টান্ত দেখিয়েছি, যেমন : ফস্‌ ক'রে, চট্‌ ক'রে, ধুপ্‌ ক'রে, ধাঁ ক'রে, সোঁ ক'রে, ঢ্যাঁচ করে দেওয়া, গ্যাঁট হয়ে বসা, ঢিপ করে প্রণাম করা। এদের কোনো শব্দই সার্থক নয় অথচ অর্থবান শব্দের চেয়ে এরা স্পষ্ট করে মনে রেখাপাত করে। ঝাঁ ঝাঁ করছে রোদ্‌দুর, ধু ধু করছে মাঠ, থই থই করছে জল : এরা এক আঁচড়ের ছবি।

শারীরিক বেদনাগুলি ইংরেজি ভাষায় অর্থবান শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়, যেমন : throbbing cutting gnawing pricking ইত্যাদি। এরকম দৈহিক উপলব্ধির ভিন্ন ভিন্ন শব্দ বাংলা ভাষায় নেই। বাংলার আছে ধ্বনি : দব্‌দব্‌ ঝন্‌ঝন্‌ টন্‌টন্‌ কন্‌কন্‌ কুট্‌কুট্‌ কর্‌কর্‌ তিড়িক্‌তিড়িক্‌ ঘিন্‌ঘিন্‌ ঝিম্‌ঝিম্‌ সুড়্‌সুড়্‌ সির্‌সির্‌। এই ধ্বনিগুলির সঙ্গে অনুভূতির কোনোই শব্দগত সাদৃশ্য নেই, তুব এই নিরর্থক শব্দগুলির দ্বারা অনুভূতির যেমন স্পষ্ট ধারণা হয় এমন আর কিছুতেই হতে পারে না।

বাংলা ক্রিয়াপদে আর-এক বিশেষত্ব আছে দুটো ক্রিয়ার জোড় দেওয়া, তাদের মধ্যে অর্থের সংগতি না থাকলেও, যেমন : হয়ে যাওয়া, হয়ে পড়া, হতে থাকা, হয়ে ওঠা; করে যাওয়া, করে ফেলা, করে তোলা, করে দেওয়া, করে চলা, করে ওঠা, করতে থাকা। হয়ে পড়া, করে ফেলা'র ভাবটা একই; একটা অক্রিয়, একটা সক্রিয়। আর-একরকম আছে বিশেষ্যের সঙ্গে ক্রিয়ার কিংবা দুই ক্রিয়ার অসংগত যোগ, যেমন : মার খাওয়া, উঠে পড়া, গাল দেওয়া, বসে যাওয়া, ঘুরে মরা, গিয়ে পড়া, খেয়ে বাঁচা, নেড়ে দেওয়া।

৭ কার্তিক, ১৩৪৫ শান্তিনিকেতন

২১ শে ফেব্রুয়ারি।

“২১ শে ফেব্রুয়ারি কি হয়েছিল?

‘অনেক ফাইটিং হয়েছিল’

“কি নিয়ে জানি?”

‘ভাষা নিয়ে... ল্যাঙ্গুয়েজ প্রবলেম নিয়ে’

“ও আচ্ছা, তারপর?”

‘তারপর উই ওউন... জিতে গেছি... পত পত করে পতাকা উড়িয়েছি’

“কিসের পতাকা?”

‘স্বাধীন বাংলার পতাকা’

“ও .. আচ্ছা সেদিনের কারো নাম মনে আছে?”

‘অবশ্যই মনে আছে... বীরশ্রেষ্ঠ সালাম,রফিক,বরকত,জব্বার ... এরা ফ্রন্ট লাইনে ছিলো তাই আগে গুলি খাইসে’

“ওরা তো বীরশ্রেষ্ঠ না”

‘ও আচ্ছা আচ্ছা মনে পড়েছে...ভাষা-সৈনিক’

“উহু হয়নি... আচ্ছা, ভাষা-সৈনিক আর ভাষা-শহীদের পার্থক্যটা জানেন?”

‘জানতাম... ভুলে গেছি... সেইই কবে স্কুলে পড়ে এসেছি, মনে থাকে কেমনে? আপনাকে যদি এখন কোলা ব্যাঙ আর কুনো ব্যাঙের পার্থক্য জিজ্ঞেস করি, পারবেন?’

“না”

‘তাইলে? প্যাঁচান কেন?’

“সরি

‘ওকে ঠিকাছে... যাইগা’

“সরি সালাম সাহেব”

‘আমার নাম তো সালাম না’

“সরি রফিক সাহেব”

‘আরে, রফিক আমার নাম কে বলল?’

“সরি জব্বার সাহেব”

‘কি শুরু করেছেন?’

“আমি তো আপনাকে সরি বলছি না”

লেখক ঃ আরিফ আর হোসাইন

বাংলাভাষা পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৭)

"হতে' আর "থেকে' এই দুটো শব্দ বাংলা অপাদানের সম্বল। প্রাচীন হিন্দিতে "হতে' শব্দের জুড়ি পাওয়া যায় "হুন্তো', নেপালিতে "ভন্দা', সংস্কৃত "ভবন্ত'। প্রাচীন রামায়ণে দেখেছি : ঘরে হনে, ভূমি হনে।

অপভ্রংশ প্রাকৃতের অপাদানে পাওয়া যায় : হোংতও হোংতউ। "থেকে' শব্দটার ধ্বনিসাদৃশ্য পাওয়া যায় নেপালিতে, যেমন : "তাঁহা দেখি = সেখান থেকে, মাঝ দেখি = মাঝ থেকে।' গুজরাটিতে আছে "থকি'। বাংলায় অপাদানে একটা গ্রাম্য প্রয়োগ আছে "ঠেঞে' (ঠাঁই হতে), যথা : তোমার ঠেঞে কিছু আদায় করতে হবে।

একদা পালি ব্যাকরণে পেয়েছিলুম "অজ্জতগ্‌গে' শব্দ। এর সংস্কৃত মূল "অদ্যতঃ অগ্রে'; "আজ থেকে' শব্দের সঙ্গে এর ধ্বনি ও অর্থের মিল আছে। জানি নে পণ্ডিতদের কাছে এ ইঙ্গিত গ্রাহ্য হবে কি না।

এখানে একটা কথা মনে রাখতে হবে। "পশুর থেকে মানুষের উৎপত্তি' এ কথা বলা চলে। কিন্তু "মানুষ থেকে গন্ধ বেরচ্ছে' বলি নে, বলি "মানুষের গা থেকে' কিংবা "কাপড় থেকে'। "বিপিন থেকে টাকা পেয়েছি' বলা চলে না, বলতে হয় "বিপিনের কাছ থেকে টাকা পেয়েছি'। এর কারণ, অচেতন পদার্থের নামের সঙ্গেই "থেকে' শব্দের সাক্ষাৎ সম্বন্ধ। তাই "মেঘ থেকে' বৃষ্টি নামে, "পাখি থেকে' গান ওঠে না, "পাখির কণ্ঠ থেকে' গান ওঠে।

কেবল "থেকে' নয়, "হতে' শব্দ-প্রয়োগেও ঐ একই কথা। "অযোধ্যা হতে' রাম নির্বাসিত হয়েছিলেন, কিন্তু তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন "রাবণের কাছ হতে'।

তুলনামুলক অর্থেও ব্যবহৃত হয় : হতে থাকে চেয়ে চাইতে।

অন্য প্রসঙ্গে সম্বন্ধপদের আলোচনা হয়ে গেছে। এক কালে বহুবচনে সম্বন্ধপদের "দিগের' শব্দের পূর্বেও সম্বন্ধের আর-একটা বিভক্তি থাকত, যেমন "আমারদিগের'।

বাংলা সম্বন্ধপদের একটা প্রত্যয় আছে "কার'। এর ব্যবহার সার্বত্রিক নয়। সময়-বাচক ক্রিয়াবিশেষণে "এখন' "তখন' "যখন' "কখন'এর সঙ্গে "কার' জোড়া হয়। বিশেষ কোনো "বেলাকার' "দিনকার' "রাতকার'ও চলে। "আজ' এবং "কাল' শব্দে কর্মকারকের বিভক্তির সঙ্গে যোগ ক'রে ওর ব্যবহার : আজকেকার কালকেকার। "পশুLl', অমুক "হপ্তাকার' বা "বছরকার' হয়, কিন্তু অমুক "মাসকার' কিংবা অমুক "ঘণ্টাকার' হয় না। "সকলকার' হয়, "সমস্তকার' হয় না। "সত্যকার' হয়, "মিথ্যাকার' হয় না। ভিতরকার বাহিরকার উপরকার নিচেকার এদিককার ওদিককার এধারকার ওধারকার-- চলে। ব্যক্তি বা বস্তুবাচক শব্দ সম্পর্কে এর ব্যবহার নেই। "জন' শব্দ যোগে সংখ্যাবাচক শব্দে "কার' প্রয়োগ হয় : একজনকার দুজনকার। কিন্তু "জন' ছাড়া মনুষ্যবাচক আর-কোনো শব্দের সঙ্গে ওর যোগ নেই। "ইংরেজকার' বলা চলে না।

৭ কার্তিক, ১৩৪৫ শান্তিনিকেতন

বাংলাভাষা পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৬)

বাংলা বিশেষ্যশব্দে সংস্কৃত বিশেষ্যশব্দের অনুস্বার বিসর্গ না থাকাতে কর্তৃকারকে চিহ্নের কোনো উৎপাত নেই। একেবারে নেই বলাও চলে না। কর্তৃপদে মাঝে মাঝে একারের সংকেত দেখা যায়, যেমন : পাগলে কী না বলে।

ভাষাবিজ্ঞানীরা এইরকম প্রয়োগকে তির্যকরূপ বলেন, এ যেন শব্দকে ত্যাড়চা করে দেওয়া। সব গৌড়ীয় ভাষায় এই তির্যকরূপ পাওয়া যায়, যেমন : দেবে জনে ঘোড়ে। বাংলায় বলি : দেবে মানবে লেগেছে, পাঁচজনে যা বলে। "ঘোড়ে' বাংলায় নেই, আছে "ঘোড়ায়' : ঘোড়ায় লাথি মেরেছে।

এই তির্যকরূপের ভিতর দিয়েই কারকের বিভক্তিগুলো তৈরি হয়েছে, আর হয়েছে বহুবচনের রূপ, যেমন : মানুষে থেকে, মানুষেরা মানুষেতে মানুষেদের। তোমা আমা যাহা তাহা থেকে: তোমার আমার যাহার তাহার তোমাকে আমাকে ইত্যাদি।

এই তির্যকরূপের কর্তৃকারক এক সময়ে সাধারণ অর্থে ছিল : আপনে শিখায় প্রভু শচীর নন্দনে, সোই আপনে করু সেবা। প্রাচীন রামায়ণে দেখা যায় নামসংজ্ঞায় প্রায় সর্বত্রই এই তির্যকরূপ, যেমন : সুমিত্রায়ে কৌশল্যায়ে মন্থরায়ে লোমপাদে। এখন এর ব্যবহারে একটা বিশেষত্ব ঘটেছে। "বানরে কলা খায়' বলে থাকি, "গোপালে সন্দেশ খায়' বলি নে। বাংলার কোনো কোনো অংশে তাও বলে শুনেছি। ময়মনসিংহগীতিকায় আছে : কোনো দোষে দোষী নয় আমার সোয়ামিজনে।

শ্রেণীবাচক কর্তৃপদে তির্যকরূপ দেখা যায়, অন্যত্র যায় না। "বাঘে গোরুটাকে খেয়েছে' বললে বোঝায় : বাঘজাতীয় জন্তুতে গোরুকে খেয়েছে, ভালুকে খায় নি। যখন বলি "রামে মারলে মরব, রাবণে মারলেও মরব', তখন বক্তিগত রামরাবণের কথা বলি নে; তখন রামশ্রেণীয় আঘাতকারী ও রাবণশ্রেণীয় আঘাতকারীর কথা বলা হয়।

"জন' শব্দের তির্যকরূপ "জনা'। একো জনা একো রকমের : এই "জনা' বিশেষ একজনের সম্বন্ধে নয়, জনগুলি এক-একটি শ্রেণীগত। "একহ' শব্দ থেকে হয়েছে "একো'।

মনে রাখা দরকার, কর্তৃপদের এই তির্রকরূপ জড় পদার্থে খাটে না। যখন বলি "মেঘে অন্ধকার করেছে' তখন বুঝতে হবে, "মেঘে' করণকারক।

গৌড়ীয় ভাষার প্রাচীন ইতিহাসে দেখা যায়, শব্দরূপে সম্বন্ধপদের চিহ্নই প্রাধান্য পেয়েছিল। অবশেষে প্রয়োজনমতো তারই উপরে স্বতন্ত্র কারকের বিভক্তি যোগ করতে হয়েছে। তারই নিদর্শন পাই কর্মকারকে "তোমারে' "শ্রীরামেরে' প্রভৃতি শব্দে। আধুনিক বাংলা পদ্যেও এই রে বিভক্তিরই প্রাধান্য। বাংলা রামায়ণ-মহাভারতে কর্মকারকে কে বিভক্তি অল্প। কবিকঙ্কণে দেখা গেছে : খাওয়াব তোমাকে হে নবাৎ আম্ররসে। অন্যত্র : উজানী নগরকে বাসিবে যেন হিম। এরকম প্রয়োগ বেশি নেই।

বাংলা নির্বস্তুক পদার্থ-বাচক শব্দের কর্মকারকে টা টি'র প্রয়োগবাহুল্য, যথা : "মৃত্যুভয় দূর করো', "চক্ষুলজ্জা ছাড়ো'। কিন্তু ওরই মধ্যে একটু বিশেষত্বের ঝোঁক দিয়ে বলা চলে : মৃত্যুভয়টা দূর করো, চক্ষুলজ্জাটা ছাড়ো। "মৃত্যুভয়টাকে দূর করো' বলতেও চোষ নেই।

মানুষের বা জন্তু-জানোয়ারের বেলায় কর্মকারকের চিহ্ন নিয়ে শৈথিল্য করা হয় নি : গোপাল যদি সন্দেশের যোগ্য হয় তা হলে গোপালকেই সন্দেশ দেওয়া যায়। কিন্তু যে বিশেষ্যপদ সাধারণবাচক তার বেলায় কর্মকারকের চিহ্ন কাজে লাগে না, যেমন : রাখাল গোরু চরায়। "গোরুকে' করায় না। ময়রা সন্দেশ বানায়, "সন্দেশকে' বানায় না।

বিপদ এই, একটা নিয়মের নাগাল যেই পাওয়া যায় অমনি জুটে যায় অনিয়মের দৃষ্টান্ত, যথা : যে গাড়োয়ান গোরুকে পীড়ন করে সে তো কশাইয়েরই খুড়তুতো ভাই। এখানে গোরু যদিও সাধারণ বিশেষ্য তবু এখানে কর্মকারকে কে বিভক্তি দ্বারা তার সঙ্গে বিশেষ বিশেষ্যের মতো ব্যবহার করা হল। ঝিকে মেরে বৌকে শেখানো : এখানে "ঝি' "বৌ' বিশেষ বিশেষ্য নয়, সাধারণ বিশেষ্য, তবু কে বিভক্তি গ্রহণ করেছে। এটা বেআইনি বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আইন আছে প্রচ্ছন্ন হয়ে। রাখালসাধারণ গোরু চরিয়ে থাকে, সেই তার ব্যাবসা। কিন্তু গাড়োয়ান গোরুকে যে পীড়ন করে সে একটা বিশেষ ঘটনা, না পিটোতেও পারত। বউয়ের উপকারের জন্যে শাশুড়ি যদি ঝিকে মারে সে একটা বিশেষ ব্যাপার, মারাটা সাধারণ ঘটনা নয়। ব'লে থাকি "ময়রা মালপো তৈরি ক'রে, "মালপোকে তৈরি করে' বলিই নে। কিন্তু অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বলা অসম্ভব নয় যে : ময়রা মালপোকে করে তোলে জুতোর সুকতলা। মালপো তৈরি করা সাধারণ ময়রা কর্তৃক সাধারণ ব্যাপার; সুকতলার মতো মালপো তৈরি করাটা নিঃসন্দেহ সাধারণ ব্যাপার নয়।

সর্বনামের প্রসঙ্গে করণকারকের নিয়ম পূর্বেই বলা হয়েছে। অন্য বিশেষ্যপদ সম্বন্ধেও প্রায় সেই একই কথা। দ্বারা দিয়ে ক'রে : এই তিনটে শব্দ করণকারকের প্রধান উপকরণ। সর্বনামের সঙ্গে অন্য বিশেষ্যপদের একটা প্রভেদ বিভক্তি নিয়ে; সর্বনামে কে, বিশেষ্যে এ। যথা : হাতে মারা ভালো ভাতে মারার চেয়ে, পৃথিবী পুরাবে তুমি ভরতের ধনে। সর্বনামে এই বিভক্তি বিকল্পে য়, যেমন : তোমায় দিয়ে। নিম্নের দৃষ্টান্তে কর্মকারকের চিহ্ন দেখি নে, যথা : মন দিয়ে শোনো, হাত দিয়ে খাও, লোক দিয়ে চিঠি পাঠাও। মন দিয়ে কাজ করো, বাজে কাজে হাত দিয়ো না : এখানে মনও নির্বস্তুক, হাতও তাই; এ হাত দৈহিক হাত নয়, এ হাত বলতে বোঝায় চেষ্টা। লোক দিয়ে চিঠি পাঠাও : এ লোক কোনো বিশেষ লোক নয়, সাধারণভাবে যাকে হোক কাউকে দিয়ে চিঠি পাঠাবার কথা হচ্ছে। ঘরামি দিয়ে চাল ছাইতে হবে : এখানে বিকল্পে "ঘরামিকে দিয়ে'ও হয়। কিন্তু ব্যক্তিবাচক বিশেষ্যে কর্মকারকে কে বিভক্তি থাকাই চাই : রামকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়ো। মানুষ ছাড়া অন্য জীববাচক বিশেষ্য সম্বন্ধেও এই নিয়ম, যেমন : বাঁদরকে দিয়ে চাষ করানো চলে না, ধোবার গাধাকে দিয়ে ঘোড়দৌড় খেলাবে না কি।

করণকারকে "ক'রে শব্দ অধিকরণরূপের সঙ্গে যুক্ত হয় : গ্লাসে ক'রে জল খাও, তুলিতে ক'রে আঁকো।

করণকারকে "দিয়ে' আর "ক'রে' শব্দে পার্থক্য আছে। "পাল্কিতে ক'রে' যাওয়া চলে, "পাল্কি দিয়ে' চলে না। খাবার বেলায় বলি "হাতে ক'রে খাও'; নেবার বেলায় বলি "হাত দিয়ে নাও'। একটাতে হাত হচ্ছে উপায়, আর-একটাতে হাত হচ্ছে আধার। পাল্কিতে "ক'রে' মানুষ যায়, কিন্তু যায় পথ "দিয়ে'। এখানে পাল্কি উপায়, পথ আধার। কিন্তু অর্থহিসাবে বিকল্পে হাত উপায়ও হতে পারে, আধারও হতে পারে। তাই "হাত দিয়ে খাও' বলাও চলে, "হাতে ক'রে খাও' বলতেও দোষ নেই।

ব'লে থাকি : বড়ো রাস্তা দিয়ে যখন যাবে গাড়িতে ক'রে যেয়ো। কোনো সাহেব যদি বলে "রাস্তায় ক'রে যাবার সময় গাড়ি দিয়ে যেয়ো', বুঝব সে বাঙালি নয়। লোক "দিয়ে' পাঠাব চিঠি, লোকটা উপায়; ব্যাগে "ক'রে' সে চিঠি নেবে, ব্যাগটা আধার।

৭ কার্তিক, ১৩৪৫ শান্তিনিকেতন

সৃজনশীল প্রশ্ন - ১

কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন -মার্ক -৪০
১/ একটি বাঁশের ১.৫ অংশ কাদায় আর এবং ২.৮ অংশ হচ্ছে পানিতে । যদি পানির উপর তৈল মাখা অবস্থায় বাঁশটির দৈর্ঘ্য ৪ মিটার হয় । এবং সৈয়দ মহসীন আলীর সাথে তিনটি বানর বাঁশের আগায় উঠে সিগারেট টানে ? তাহলে বের করতে হবে পুরো বাশটির দৈর্ঘ্য কত? ---১০
২/ লতিফের বাবা এক কেজি গাঁজার দাম নির্ধারণ করে দিলেন ৭০ টাকায় । বাজার থেকে ফেরার পথে লতিফ ২০০ গ্রাম দিয়ে তিনটি স্টিক ৩ ইঞ্ছি করে বানালেন । প্রত্যেক টানে .২ ইঞ্ছি করে শেষ হলে ২০ মিনিট পর গাঁজার পরিমান কত ? --১০
৩/ জনাব নাহিদ সাহেব একটি “হউক মাওলা” স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল , পরীক্ষার আগের রাতে সব ছাত্রদের হাতে প্রশ্ন তুলে দিয়ে । স্যারদের বলে দিলেন এইবার আপনাদের কষ্ট কম ।আপনাদের খাতা দেখতে হবে না । আমার সব স্টুডেন্ট সঠিক উত্তর দিয়েছে। তবুও ঐ স্কুলে চারজন ছাত্র ফেল করার কারন কি? ---১০
৪/ একটি মেয়ে সাতটি ছেলের সাথে প্রেম করে । একটি ছেলেকে দিনে সে ১৭ মিনিট করে টাইম দেন । তিনটি ছেলের বয়স গড়ে ২৪ বছর । এবং প্রথম ছেলেটির বাবা রাবিশ আলীর বয়স ২৯ হলে। মেয়েটির প্রেমর বয়স কত ? একটি টাক এবং ভুঁড়ির আলোকে বিশ্লেষণ কর ? ---১০

By : Merely Nayamul

একজন আদর্শ(!!!) ছাত্র হবার মিশন !

- সকালে ক্লাস শুরুর আগে ১০ মিনিট আগে উঠে, কোন রকমে হাত-মুখ ধুয়ে, শার্ট-প্যান্ট সামনে যা পাবেন সেটা পড়েই ক্লাস অভিমুখে দৌড় লাগান। যাওয়ার পথে, আশে পাশের কোন দোকানে চুইংগাম পাইলে, চুইংগাম চিবাইতে চিবাইতে দৌড়ান ... মিশন, “ম্যাডামের আগে ক্লাসে ঢুকা” [হলে/ হোস্টেলে থাকাদের জন্যে প্রযোজ্য]
-ঐ সব ব্যাগ-ট্যাগের ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে, প্যান্টের পিছনের পকেটে কোন রকমে একটা খাতা দুই ভাজ করে নিয়ে যেতে হবে ক্লাসে। মনে রাখবেন, আপনি কিন্তুক আদর্শ ছাত্র হবার মিশনে আছেন!! যদি মোবাইল প্যান্ট ইউজ করেন, তাইলে সাইডের পকেটেও নিতে পারেন খাতাটি।। মনের ভুলে(!!) বেশিরভাগ সময়েই কলম না নিয়ে যাবেন (আসলে, আপনার কলম আছে কিনা, আপনি নিজেই জানেন না!!)। অতঃপর, ক্লাসে কোন বন্ধুর কাছ থেকে কলম নিয়ে সেটা আজীবনের বাকির খাতায় তুলে দিবেন...।
- ক্লাসে ঢুকেই সামনের বেঞ্চের দিকে কোন রকম ভ্রুক্ষেপ না করে, শেষ দিকের কোন বেঞ্চে জায়গা আছে, সেটা শকুইন্না চোখ দিয়ে খুঁজে বের করে ফেলেন। এবং, যতটা পিছনের বেঞ্চে সম্ভব বসে পড়েন। আজকাল সবাই আদর্শ ছাত্র হবার প্রানপ্রন চেষ্টায় লিপ্ত বিধায়, শেষ দিকের বেঞ্চে বেশী দেড়িতে গেলে সিট পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়।
বি দ্রঃ কিছু স্যার ক্লাসে বেছে বেছে লাস্ট বেঞ্চের ব্রিলিয়ান্ট (!!) ছাত্রদের মগজের পরীক্ষা নেন। তাদের ক্লাসের ক্ষেত্রে, অবশ্যই অবশ্যই সামনের সারিতে স্থান করে নিতে হইবে নিজ দায়িত্বে।
- ক্লাসে সফল ভাবে ঘুমাতে হবে। সফল ভাবে মানে, এমন ভাবে ঘুমাতে হবে যাতে শিক্ষক ঘুণাক্ষরেও টের না পান। এ জন্যে আপনাকে স্যারের দিকে তাকিয়ে চোখ খোলা রেখে শরীরের সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গকে ঘুমের রাজ্যে নিয়ে যাবার বিশেষ ক্ষমতা থাকা লাগবে। সেই সাথে, মেরুদণ্ড বাকা না করে ঘুমানো, জেগে জেগে ঘুমানো, পিছনের টেবিলে হেলান না দিয়ে ঘুমাতে পারা বিশেষ সক্ষমতা হিসেবে বিবেচ্য...
- মাঝে সাজে ঘুমের অতিশাহ্যে দুয়েকটা ক্লাস মিস হতেই পারে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, নিজের এটেন্ডেন্স টা যেনো ঠিক মত থাকে ! এ জন্যে আগে থেকেই প্রক্সিমেট ঠিক করে রাখা বাঞ্চনীয়।।
- সকাল বিকাল,ঘুরতে ফিরতে, খাইতে-খেলতে-পড়তে পড়তে, ডেটিং এর সময়,আউটপুট ডেলিভারির সময়ও সমানহারে ফেসবুকিং এ মত্ত থাকা একজন আদর্শ ছাত্রের এক অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচ্য!!!
- ক্লাসে কোন স্যার পড়া ধরলে এমন ভাবে তাকাতে হবে, যেন আপনি এই মাত্র পৃথিবীতে ল্যান্ড করেছেন। পৃথিবীর মানুষের ভাষা এখনো শিখতে পারেন নি।
- ক্লাসে সফলতার সাথে ফেসবুকিং করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
- এবং বছর শেষে ঠিকই পরীক্ষার আগে একটা কোপ দিয়ে, কোন রকমে একটা “পাস” দিয়া পরবর্তী ক্লাসে/ইয়ারে সফলভাবে গমন করা... এবং যথারিতি উপরের কাজগুলো সফল ভাবে ও অব্যাহতভাবে করে যাওয়া।
... এভাবেই আপনি হয়ে যাবেন একজন আদর্শ(!!) ছাত্র।

লেখক ঃ এ এন ফায়সাল আহমেদ

বাংলাভাষা পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৫)

বাংলায় নির্দেশকশব্দরূপে প্রধানত ব্যবহৃত হয় : টি টা খানি খানা। ইংরেজিতে এর প্রতিরূপ the। ইংরেজিতে the বসে শব্দের পূর্বে, বাংলায় নির্দেশক শব্দ বসে শব্দের পরে, বস্তুবাচক বা জীববাচক শব্দের অনুষঙ্গে। যা বস্তু বা জীব-বাচক নয় স্থানবিশেষে তার সঙ্গেও যোগ হয়, যেমন : বেশি লজ্জাটা ভালো নয়, ওর হাসিটা বড়ো মিষ্টি। এখানে লজ্জা ও হাসিকে বস্তুর মতোই কল্পনা করে নেওয়া হয়েছে।

এক দুই তিন শব্দ সংখ্যাবাচক। ওদের সঙ্গে প্রায় নিত্যযোগ টি ও টা'র। ইংরেজিতে এ দস্তুর নেই। বাংলায় সংখ্যাবাচক শব্দ যখন সমাসে বাঁধা পড়ে তখন তাদের টি টা পড়ে খ'সে, যেমন : দশসের আটহাত পাঁচমিশলি। তা ছাড়া "জন' শব্দের সংযোগে টি টা চলে না। "একটি জন' বলি নে, "একটি মানুষ' বলেই থাকি।

আরও কয়েকটি নির্দেশক শব্দ আছে, যেমন : টু টুক্‌ টুকু গোছা গাছি। তেল জল ধুলো কাদা প্রভৃতি অনির্দিষ্ট-আকার-বাচক শব্দে সংখ্যাবাচক শব্দের ব্যবহার চলে না। "একটা তেল' "একটি ধুলো' বলি নে, কিন্তু "একটু তেল' "একটু ধুলো' বলেই থাকি। "অনেকটা জল' "অনেকটা ময়দা' বলে থাকি কিন্তু "অনেকটি' মাটি বা দুধ বলা চলে না। কেননা টা শব্দে ব্যাপকতা বোঝায়, টি শব্দে বোঝায় খণ্ডতা।

টু টুক্‌ টুকু : স্বল্পতাসূচক। সজীব পদার্থে এর ব্যবহার নেই। ছোটো গাধার বাচ্ছাকেও কেউ "গাধাটুকু' বলবে না, পরিহাস ক'রে "মানুষটুকু' বলা চলে।

সরু লম্বা জিনিসের সঙ্গে "গাছি' "গাছা'র ব্যবহার : দড়িগাছা বেতগাছা হারগাছা। দুই-একটা ব্যতিক্রম থাকতে পারে, যেমন "চুড়িগাছি'। লম্বায়-ছোটো জিনিসে চলে না; "গোঁফগাছি' কিছুতেই নয়। টুকু চলে ছোটো জিনিসে, কিন্তু গড়নওয়ালা জিনিসে নয়। "চুনটুকু' হয়, "পদ্মটুকু' হয় না; "আংটিটুকু' হয় না, "পশমটুকু' হয়। সন্নাসীঠাকুরের "রাগটুকু' প্রভৃতি অবস্তুবাচক শব্দেও চলে। "একটুক' হয়, কিন্তু "দুটুকু' তিনটুকু' হয় না। "ঐটুক্‌' শব্দের সঙ্গে "খানি' জোড়া যায়, "খানা' যায় না; "একটুখানি', কিন্তু "একটুখানা ' নয়। জীববাচক শব্দে খাটে না; "একটুক জীব' নেই কোথাও।

আরও কয়েকটি নির্দেশক পদ আছে যা শব্দের পূর্বে বসে। তারা সর্বনাম জাতের, যেমন : সেই এই ঐ।

৭ কার্তিক, ১৩৪৫ শান্তিনিকেতন

বাংলাভাষা পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৪)

বাংলা বিশেষ্যপদে বহুবচনের প্রভাব অল্পই। অধিকাংশ স্থলেই "সব' "গুলি' "সকল' প্রভৃতি শব্দ জোড়া দিয়ে কাজ চালানো হয়। এ ভাষায় সর্বনাম শব্দে বহুবচনের বিভক্তি যতটা চলে অন্যত্র ততটা নয়। বহুবচনে "মানুষরা' ব'লে থাকি অথচ "ঘোড়ারা' বলতে কানে ঠেকে, অথচ "ঘোড়াদের' বলা চলে। মোটের উপর এ কথা খাটে যে সচেতন জীবদের নিয়ে বহুবচনে রা এবং সম্বন্ধে ও কর্মকারকে দের চিহ্ন ব্যবহার হয়ে থাকে। "মোষেরা খুব বলবান জীব' বা "ময়ূরদের পুচ্ছ লম্বা' এটা নিয়মবিরুদ্ধ নয়। এই রা চিহ্ন সাধারণ বিশেষ্যে লাগে। বিশেষ বিশেষ্যে ওর প্রয়োগ কানে বাধে। বলতে পারি "ঐ মোষরা পাঁকে ডুবে আছে', কিন্তু "ঐ মোষগুলো পাঁকে ডুবে আছে' বললেই মানানসই হয়। "মোষরা' বললে মোষজাতিকে মনে আসে, "মোষগুলো' বললে মনে আসে বিশেষ মোষের দল।

"মানুষরা নিষ্ঠুরতায় পশুকে হার মানালো' ঠিক শোনায়, এও ঠিক শোনায় : কুলিগুলো নির্দয়ভাবে গাড়িতে বোঝা চাপিয়েছে। কিন্তু "মানুষগুলো পশুকে হার মানায়' অশুদ্ধ। সাধারণ বিশেষ্যে রা চলে কিন্তু বিশেষ বিশেষ্যে গুলো। "মানুষরা ওখানে জটলা করছে' বললে মনে হয় যেন জানানো হচ্ছে অন্য কোনো জীব করে নি। এখানে "মানুষগুলো' বললেই সংশয় থাকে না।

"টেবিলরা' "চৌকিরা' নিষিদ্ধ। জড়পদার্থের "গুলো' ছাড়া গতি নেই। আর-একটা শব্দ আছে, কথার পূর্বে বসে সমষ্টি বোঝায়, যেমন "সব' : সব চৌকি, সব জন্তু, সব মানুষ। কিন্তু এখানে এই শব্দ কেবলমাত্র বহুবচন বোঝায় না, সঙ্গে সঙ্গে একটা ঝোঁক দেয়। সব চৌকি সরিয়ে দাও, অর্থাৎ একটাও বাকি রেখো না। সব ভিখিরিই বাঙালি, অর্থাৎ নির্বশেষে বাঙালি। "সব' প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে "গুলো' প্রয়োগটা যোগ দিতে চায়, যেমন : সব চৌকিগুলোই ভাঙা, সব ভিখিরিগুলোই চেঁচাচ্ছে। এখানে "সব' বোঝাচ্ছে একান্ততা, আর "গুলো' বোঝাচ্ছে বহুবচন। বহুবচনে এক সময়ে "সব' ব্যবহৃত হত। কবিতায় এখনো দেখা যায়, যেমন : পাখিসব তোমাসব ইত্যাদি। আমরা বলি : কাফ্রিরা সব কালো। বহুবচনের রা বিভক্তির সঙ্গে জোড়া লাগে "সব' শব্দ : এরা সব গেল কোথায়। শুধু "এরা গেল কোথায়' বললেই চলে, কিন্তু "সব' শব্দের দ্বারা সমষ্টির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এই "সব' শব্দ একবচনকে বহুবচন করে না, বহুবচনকে সুনির্দিষ্ট করে। "সবাই' শব্দে আরও বেশি জোর লাগে : এরা যে সবাই চলে গেছে, কিংবা, চৌধুরীদের সবাইকেই নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। "সব' শব্দের সমার্থক হচ্ছে "সকল' : এরা সকলেই চ'লে গেছে, কিংবা, চৌধুরীদের সকলকেই নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। কিন্তু "সকল' শব্দের প্রয়োগ "সব' শব্দের চেয়ে সংকীর্ণ।

এই প্রসঙ্গে আমাদের ভাষার একটা বিশেষ ভঙ্গীর কথা বলি। "সব' শব্দের অর্থে কোনো দূষণীয়তা নেই, "যত' সর্বনাম শব্দটাও নিরীহ। কিন্তু দুটোকে এক করলে সেই জুড়িশব্দটা হয়ে ওঠে নিন্দার বাহন। "মূর্খ' "কুঁড়ে' কিংবা "লক্ষ্মীছাড়া' প্রভৃতি কটুস্বাদ বিশেষণ ঐ "যত সব' শব্দটাকে বাহন ক'রে ভাষার যেন মুখ সিট্‌কোতে আসে, যথা : যত সব বাঁদর, কিংবা কুঁড়ে, কিংবা লক্ষ্মীছাড়া। এখানে বলা উচিত ঐ "যত' শব্দটার মধ্যেই আছে বিষ। "যত বাঁদর এক জায়গায় জুটেছে' বললেই যথেষ্ট অকথ্য বলা হয়। লক্ষ্য করবার বিষয়টা এই যে, "যত' শব্দটা একটা অসম্পূর্ণ সর্বনাম, "তত' দিয়ে তবে এর সম্পূর্ণতা। "তত' বাদ দিলে "যত' হয়ে পড়ে বেকার, লেগে যায় অনর্থক গালমন্দর কাজে।

বাংলা ভাষায় সর্বনামের খুব ঘটা। নানা শ্রেণীর সর্বনাম, যথা ব্যক্তিবাচক, স্থানবাচক, কালবাচক, পরিমাণবাচক, তুলনাবাচক, প্রশ্নবাচক।

"মুই' এক কালে উত্তমপুরুষ সর্বনামের সাধারণ ব্যবহারে প্রচলিত ছিল, প্রাচীন কাব্যগ্রন্থে তা দেখতে পাই। "আমহি' ক্রমশ "আমি' রূপ ধরে ওকে করলে কোণঠেসা, ও রইল গ্রাম্য ভাষার আড়ালে। সেকালের সাহিত্যে ওকে দেখা গেছে দীনতাপ্রকাশের কাজে, যেমন : মুঞি অতি অভাগিনী।

নিজের প্রতি অবজ্ঞা স্বাভাবিক নয় তাই ওকে সংকোচে সরে দাঁড়াতে হল। কিন্তু মধ্যমপুরুষের বেলায় যথাস্থানে কুণ্ঠার কোনো কারণ নেই, তাই "তুই' শব্দে বাধা ঘটে নি, নীচের বেঞ্চিতে ও রয়ে গেল। "তুহিঁ' "তুমি'-রূপে ভর্তি হয়েছে উপরের কোঠায়। এরও গৌরবার্থ অনেকখানি ক্ষয়ে গেল, বোধকরি নির্বিচার সৌজন্যের আতিশয্যে। তাই উপরওয়ালাদের জন্যে আরও একটা শব্দের আমদানি করতে হয়েছে, "আপহিঁ' থেকে "আপনি'। আইনমদে মধ্যমপুরুষের আসন ওর নয়, ওর অনুবর্তী ক্রিয়াপদের রূপ দেখলেই তার প্রমাণ হয়। "তুমি'র বেলায় "আছ'; "আপনি'র বেলায় "আছেন', এই শব্দটি যদি খাঁটি মধ্যমপুরুষ-জাতীয় হত তা হলে ওর অনুচর ক্রিয়াপদ হতে পারত "আপনি আছ' কিংবা "আছঁ'।

"আপনি' শব্দের মূল হচ্ছে সংস্কৃত "আত্মন্‌'। বাংলায় প্রথমপুরুষেও "স্বয়ং' অর্থে এর ব্যবহার আছে, যেমন : সে আপনিই আপনার প্রভু। আত্মীয়কে বলা হয় "আপন লোক'। হিন্দিতে সম্মানসূচক অর্থে প্রথমপুরুষ মধ্যমপুরুষ উভয়তই "আপ' ব্যবহৃত হয়।

বাংলা ভাষায় উত্তমপুরুষে "আম'-প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়াপদের ব্যবহার চলে, সে সম্বন্ধে কিছু বক্তব্য আছে। তার তিনরকম রূপ প্রচলিত : করলাম, করলুম, করলেম। "করলাম' নদিয়া হতে শুরু করে বাংলার পূর্বে ও উত্তরে চলে থাকে। এর প্রাচীন রূপ দেখেছি : আইলাঙ কইলাঙ। আমরা দক্ষিণী বাঙালি, আমাদের অভ্যস্ত "করলুম' ও "করলেম'। উত্তমপুরুষের ক্রিয়াপদে সানুনাসিক উকার পদ্যে এখনো চলে, যেমন : হেরিনু করিনু। কলকাতার অপভাষায় "করনু' "খেনু' ব্যবহার শোনা যায়। ক্রিয়াপদে এই সানুনাসিক উ প্রাচীন সাহিত্যে যথেষ্ট পাই : কেন গেলুঁ কালিন্দীর কূলে, দুকুলে দিলুঁ দুখ, মলুঁ মলুঁ সই। "করলেম' শব্দের আলোচনা পরে করা যাবে। কৃত্তিবাসের পুরাতন রামায়ণে দেখেছি "রাখিলোম প্রাণ'। তেমনি পাওয়া যায় "তুমি'র জায়গায় "তোমি'। বাংলা ভাষায় উকারে ওকারে দেনাপাওনা চলে এ তার প্রমাণ।

প্রথমপুরুষের মহলে আছে "সে' আর "তিনি'। রামমোহন রায়ের সময়ে দেখা যায় "তিনি' শব্দের সাধুভাষার প্রয়োগ "তেঁহ'। মেয়েদের মুখে "তেনার' "তেনরা' আজও শোনা যায়, ওটা "তেঁহ' শব্দের কাছাকাছি। প্রাচীন রামায়ণে "তাঁর'। "তাঁহার' শব্দ নেই বললেই হয়, তার বদলে আছে "তান' "তাহান'। ন'কারের অনুনাসিকটা বহুবচনের রূপ। তাই সম্মানের চন্দ্রবিন্দুতিলকধারী বহুবচনরূপী "তেঁহ' ও তিঁহো' (পুরাতন সাহিত্যে) হয়েছে "তিনি'। গৌরবে তার রূপ বহুবচনের বটে, কিন্তু ব্যবহার একবচনের। তাই পুনর্বার বহুবচনের আবশ্যকে রা বিভক্তি জুড়ে "তাঁহা' শব্দের রাস্তা দিয়ে "তাঁহারা' শব্দ সাজানো হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে যে ক্রিয়াপদটি তার দখলে তাতে আছে প্রাচীন ন'কারান্ত বহুবচনরূপ, যেমন "আছেন'। আমাদের সৌভাগ্যক্রমে পরবর্তী বাংলা ভাষায় ক্রিয়াপদে বহুবচনের চিহ্ন থাকলেও তার অর্থ হয়েছে লোপ। সংস্কৃতে বহুবচনে "পতন্তি' শব্দ আছে প্রথমপুরুষের পতন বোঝাতে। বাংলায় সেই অন্তি'র ন রয়েছে "পড়েন' শব্দে, কিন্তু এ ভাষায় "তিনি'ও পড়েন "তাঁরা'ও পড়েন। এই ন'কার-ধারী ক্রিয়াপদ কেবল "আপনি' আর "আপনারা', "তিনি' ও তাঁরা', এঁদের সম্মান রক্ষার কাজেই নিযুক্ত। প্রাচীন রামায়ণে এইরূপ স্থানে প্রায় সর্বত্রই দেখা যায় "পড়েন্ত' "দেখিলেন্ত' প্রভৃতি ন্ত-বিশিষ্ট ক্রিয়াপদ একবচনে এবং বহুবচনে, প্রথমপুরুষে।

সদ্যঅতীত কালের প্রথমপুরুষ ক্রিয়াপদে বিকল্পে ইল এবং ইলে প্রয়োগ হয়, যেমন : সে ফল পাড়ল, সে ফল পাড়লে। এই একার প্রয়োগ প্রাচীন পদাবলীতে দৈবাৎ দেখেছি, যথা : বিঁধিলে বাণ। কিন্তু অনেক দেখা গেছে ময়নামতীর গানে, যেমন : বিকল দেখি হাড়িপা রহিলে। এ সম্বন্ধে একটা সাধারণ নিয়ম এই যে, অচেতনবাচক শব্দের ক্রিয়াপদে "এ' লাগে না। অসমাপিকাতে লাগে, যেমন : পা ফুললে ডাক্তার ডেকো। "তার পা ফুলল' হয়, "পা ফুললে' হয় না। নির্বস্তুক শব্দ সম্বন্ধেও সেই কথা : তাঁর কলকাতায় যাওয়া ঘটল না। "ঘটলে না' হতে পারে না। এ ছাড়া নিম্নলিখিত কয়েকটি ক্রিয়াপদে "এ' খাটে না : এল গেল হল, প'ল (পড়ল), ম'ল (মরল)। দুই অক্ষরের ক্রিয়াপদমাত্রে এই ব্যতিক্রম হয় এমন যেন মনে করা না হয়। তার প্রমাণ : খেল নিল দিল শুল ধুল। ইতে-প্রত্যয়যুক্ত জোড়া ক্রিয়াপদে "এ' লাগে না, যেমন : করতে থাকল, হাসতে লাগল। কিন্তু ইয়া-প্রত্যয়যুক্ত জোড়া ক্রিয়াপদে লাগে, যেমন : সে হেসে ফেললে। এ ছাড়া আরও দুই-এক জায়গায় কানে সন্দেহ ঠেকে, যেমন : "ভোর বেলায় সে মরলে' বলি নে, "মরল'ই ঠিক শোনায়। কিন্তু "তিনি মরলেন' নিত্যব্যবহৃত। "কলকাতায় সে চললে' বলি নে, কিন্তু "তিনি চললেন' ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।

প্রাচীন রামায়ণে দেখা গেছে প্রথমপুরুষের সদ্যঅতীত ক্রিয়াপদে প্রায় সর্বত্রই ক-প্রত্যয়-সমেত একার, যেমন : দিলেক লইলেক। আবার একারের সম্পর্ক নেই এমন দৃষ্টান্তও অনেক আছে, যেমন : চলিল সত্বর, পাঠাইল ত্বরিত। আধুনিক বাংলায় এইরূপ ক্রিয়াপদে কোথাও "এ' লাগে কোথাও লাগে না, কিন্তু অন্তস্থিত ক-প্রত্যয়টা খসে গেছে।

প্রথমপুরুষ ইল-প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়াপদে এই-যে একার প্রয়োগ, এরই সঙ্গে সম্ভবত "করলেম' "চললেম' শব্দের একার-উচ্চারণের যোগ আছে। করলেন (করিল তিনি), আর, করলেম (করিল আমি) : এক নিয়মে পাশাপাশি বসতে পারে। আরও একটা কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে, সে হচ্ছে স্বরবিকারের নিয়ম। ই'র পর আ থাকলে দুইয়ে মিলে "এ' হয় তার অনেক দৃষ্টান্ত মেলে। যেমন "ঈশান' থেকে "ঈশেন', "বিলাত' থেকে "বিলেত', "নিশান' থেকে "নিশেন'।

এক কালে "মুই' ভদ্র সমাজে ত্যাজ্য ছিল না। প্রাচীন রামায়ণে পাওয়া যায় "মুঞি নরপতি'। কর্মকারকে "মোকে', কোথাও বা "মোখে'। বহুবচনে "মোরা'। আজ "মোরা' রয়ে গেছে কাব্যলোকে। কবির কলমে "আমরা' শব্দের চেয়ে "মোরা' শব্দের চলন বেশি। প্রাচীন বাংলায় "আমরা' "তোমরা'র পরিবর্তে "আমিসব' "তুমিসব' শব্দের ব্যবহার প্রায়ই দেখা গেছে।

আমি তুমি আপনি তিনি : ব্যক্তিবাচক সর্বনাম, মানুষ সম্বন্ধেই খাটে। "সে' মেলমাত্র মানুষ নয় জন্তু সম্বন্ধেও খাটে, যেমন : কুকুরটাকে মারতেই সে চেঁচিয়ে উঠল। "সে' থেকে বিশেষণ শব্দ হয়েছে "সেই'। এর প্রয়োগ সর্বত্রই : সেই মানুষ, সেই গাছ, সেই গোরু। "এ' থেকে হয়েছে "এই'। "এ' বোঝায় কাছের বর্তমান পদার্থকে, "সে' বোঝায় অবর্তমানকে। সম্মানার্থে "এ' থেকে হয়েছে "ইনি'।

বাংলা ভাষার একটা বিশেষত্ব এই যে, সর্বনামে লিঙ্গভেদ নেই। ইংরেজিতে প্রথমপুরুষে she স্ত্রীলিঙ্গ, it ক্লীবলিঙ্গ। ইংরেজিতে যদি বলতে হয়, সে প'ড়ে গেছে, তবে সেই প্রসঙ্গে sheবা it বলাই চাই। বাংলায় ক্লীবলিঙ্গের নির্দেশ আছে, কিন্তু স্ত্রীলিঙ্গ পুংলিঙ্গের নেই। সে এ ও তিনি ইনি উনি : স্ত্রীও হয়, পুরুষও হয়। ক্লীবলিঙ্গে "সে' "এ' "ও' শব্দে নির্দেশক চিহ্ন যোগ করা চাই, যেমন : সেটা ওটা সেখানা ওখানা। বাংলা কাব্যে এই প্রথমপুরুষ সর্বনামে যখন ইচ্ছাপুর্বক লিঙ্গ নির্দেশ করা হয় না তখন ইংরেজি তর্জমা অসম্ভব হয়। "যে' সর্বনাম পদের সঙ্গে কোনো না কোনো বিশেষ্য ঊহ্য বা ব্যক্ত রূপে থাকেই। "যে গান গাচ্ছে' বলতে বোঝায়, যে মানুষ। অন্যত্র : যে ঘড়ি চলছে না, যে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

"যেই' শব্দের একটি প্রয়োগ আছে, তাতে "মুহূর্তে' বা "ক্ষণে' ঊহ্য থাকে, যথা : যেই এল অমনি চলে গেল, যেই দেখা সেই আর মুখে কথা নেই। এখানে "যেই আর সেই' শব্দের পিছনে ঊহ্য আছে "ক্ষণে'। অন্যত্র "যেই' বা "সেই' শব্দের প্রয়োগে ঊহ্য থাকে "মানুষ', যেমন : যেই আসুক সেই মার খাবে। "যাই' শব্দের সঙ্গে ঊহ্য থাকে দুটি বিশেষণের দ্বন্দ্ব, যেমন : সে যাই বলুক। অর্থাৎ, এটাই বলুক বা ওটাই বলুক, ভালোই বলুক বা মন্দই বলুক। আর-এক প্রকার প্রয়োগ আছে "যেই কথা সেই কাজ', অর্থাৎ কাজে কথায় প্রভেদ নেই--এখানে ই প্রত্যয় নিশ্চয়তা অর্থে ঝোঁক দেবার জন্যে।

"যে' অসম্পূর্ণার্থক সর্বনাম বিশেষণ, মানবার্থে তার পূরণ হয় "ও' এবং "সে' দিয়ে। অন্য জীব বা বস্তুর সম্বন্ধে যখন তার প্রয়োগ হয় তখন সেই বস্তু বা জীবের নাম তার সঙ্গে জুড়তে হয়, যেমন : যে পুকুর, যে ঘটি, যে বেড়াল। নির্বস্তুক শব্দে সেই নিয়ম, যেমন : যে স্নেহ শিশুর অনিষ্ট করে সে স্নেহ নিষ্ঠুরতা।

কখনো কখনো বাক্যকে অসম্পূর্ণ রেখে "যে' শব্দের ব্যবহার হয়, যেমন : যে তোমার বুদ্ধি। বাকিটুকু ঊহ্য আছে বলেই এর দংশনের জোর বেশি। বংলা ভাষায় এইরকম ঘোঁচা-দেওয়া বাঁকা ভঙ্গীর আরও অনেক দৃষ্টান্ত পরে পাওয়া যাবে।

মানুষ ছাড়া আর কিছুকে কিংবা সমূহকে বোঝাতে গেলে "যে' ছেড়ে "যা' ধরতে হবে, যেমন : যা নেই ভারতে (মহাভারতে) তা নেই ভারতে। কিন্তু "যারা' শব্দ "যা' শব্দের বহুবচন নয়, "যে' শব্দেরই বহুবচন, তাই ওর প্রয়োগ মানবার্থে। "তা' বোঝায় অচেতনকে, কিন্তু "তারা' বোঝায় মানুষকে। "সে' শব্দের বহুবচন "তারা'।

শব্দকে দুনো করে দেবার যে ব্যবহার বাংলায় আছে, "কে' এবং "যে' সর্বনাম শব্দে তার দৃষ্টান্ত দেখানো যাক : কে কে এল, যে যে এসেছে। এর পূরণার্থে "সে সে লোক' না বলে বলা হয় "তারা' কিংবা "সেই সেই লোক'। "যেই যেই লোক'এর ব্যবহার নেই। সম্বন্ধপদে "যার যার' "তার তার' মানবার্থে চলে। এইরকম দ্বৈতে বহুকে এক এক ক'রে দেখবার ভাব আছে। ভিন্ন ভিন্ন তুমি'কে নির্দেশ ক'রে "তুমি তুমি' "তোমার তোমার' বললে দোষ ছিল না, কিন্তু বলা হয় না।

যে বাক্যের প্রথম অংশে দ্বৈতে আছে "যে' তার পূরণার্থক শেষ অংশে সমগ্রবাচক বহুবচন-ব্যবহারটাই নিয়ম, যেমন : যে যে লোক, বা যাঁরা যাঁরা এসেছেন তাঁদের পান দিয়ো।

যত এত তত কত কত শব্দ পরিমাণবাচক। এদের মধ্যে "তত' শব্দ ছাড়া আর সবগুলিতে দ্বিত্ব চলে।

এখন তখন যখন কখন কালবাচক। "কখন্‌' শব্দ প্রায়ই প্রশ্নসূচক, সাধারণভাবে "কখন্‌' বলতে অনিশ্চিত বা দূরবর্তী সময় বোঝায় : কখন্‌ যে গেছে। কিন্তু "কখনো' প্রশ্নার্থক হয় না। প্রশ্নের ভাবে যখন বলি "সে কখনো এ কাজ করে' তখন "কি' অব্যয়-শব্দ ঊহ্য থাকে। দ্বিত্বে "কখনো' শব্দের অর্থ "মাঝে মাঝে'। "কখনোই' একটা "না' চায় : কখনোই হবে না।

"কখন্‌' শব্দের "কী খেনে' -ভঙ্গীওয়ালা রূপ কাব্যসাহিত্যে পাওয়া যায়।

"কভু' শব্দের অর্থও "কখনো'। এখন দৈবাৎ পদ্যে ছাড়া আর কোথাও কাজে লাগে না। ওর জুড়ি ছিল "তবু' শব্দটা, কিন্তু ওর সময়বাচক অর্থটা নেই। "তবু' শব্দের দ্বারা এমন কোনো সম্ভাবনা বোঝায় যেটা ঠিক উপযুক্ত বা আকাঙক্ষিত নয় : যদিও রৌদ্র প্রখর তবু সে ছাতা মাথায় দেয় না, আমি তো বারণ করেছি তবু যদি যায় দুঃখ পাবে। কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণে বহুবচন বা কর্মকারক নেই। সম্বন্ধপদে : এখনকার তখনকার কখনকার, কোন্‌ সময়কার, কোন্‌ সময়টার। অধিকরণে : কোন্‌ সময়ে, যে সময়ে। পদ্যে "কোন্‌ খনে', গ্রাম্য ভাষায় "কী খেনে' এবং অধিকাংশ স্থলেই শুভ যে সময়ে। পদ্যে "কোন্‌ খনে', গ্রাম্য ভাষায় "কী খেনে' এবং অধিকাংশ স্থলেই শুভ অশুভ লক্ষণ-সূচনায় এর প্রয়োগ হয়। অপাদান : যখন থেকে, কোন্‌ সময় থেকে।

কালবাচক ক্রিয়াবিশেষণ আরও একটা বাকি আছে "কবে'। ওর দুটি জুড়ি ছিল : এবে যবে। তারা পদ্যে আশ্রয় নিয়েছে। "তবে' একদা ওদেরই দলে ছিল, কিন্তু এখন "তবু' শব্দের মতো সেও অর্থ বদলিয়েছে। একটা সম্ভাবনার সঙ্গে আর-একটা সম্ভাবনাকে সে জোড়ে, যেমন : যদি যাও তবে বিপদে পড়বে। তবে এক কাজ করো : "তবে' শব্দের পূর্ববর্তী ঊহ্য ব্যাপারের প্রসঙ্গে কোনো কাজ করার পরামর্শ।

এই প্রসঙ্গে "সবে' শব্দটার উল্লেখ করা যেতে পারে। বলে থাকি : সবে এইমাত্র চলে গেছে, সবে পাঁচটা বেজেছে। এখানে "সবে' অব্যয়, ওতে মাত্রা বোঝায়, সকল ক্ষেত্রেই পরিমাণের সীমা বোঝাতে তার প্রয়োগ : সবে পাঁচজন। সবে ভোর হয়েছে : অর্থাৎ সময়ের মাত্রা ভোরে এসে পৌঁচেছে। সেইরকম : সবে এক পোওয়া দুধ।

যেমন তেমন অমন এমন কেমন তুলনাবাচক। "কেমনে' শব্দের ব্যবহার পদ্যে করণকারকে। "কেমন' শব্দের দ্বৈতে সন্দেহ বোঝায় : কেমন কেমন ঠেকেছে। গা কেমন কেমন করছে : একটা অনির্দিষ্ট অসুস্থ ভাব। "কেমন' শব্দের সঙ্গে "যেন'-যোগে সংশয় ঘনীভূত হয়, আর সে সংশয়টা অপ্রিয়। লোকটাকে কেমন যেন ঠেকছে : অর্থাৎ ভালো ঠেকছে না। ভঙ্গীওয়লা "কেমন' শব্দটা আছে খোঁচা দেবার কাজে : কেমন জব্দ, কেমন মার মেরেছে, কেমন জুতো, কেমন ঠকানটাই ঠকিয়েছে।

অধিকরণের বাহনরূপে "এমনি' শব্দের ব্যবহার আছে : এমনিতেই জায়গা পাই নে। খোঁচা দেবার ভঙ্গীতেও এই শব্দটার যোগ্যতা আছে : এমনিই কী যোগ্যতা।

"যত' শব্দ তার জুড়ি হারালে টিটকারির কাজে লাগে সে কথা পূর্বেই বলেছি। "অত' কথাটারও তীক্ষ্ণতা আছে, যেমন : অত চালাকি কেন, অত বাবুগিরি তোমাকে মানায় না, অত ভালোমানুষি করতে হবে না।

এজাতীয় আরও দৃষ্টান্ত আছে, যথা : "যে' এবং "যেমন'। "সে' এবং "তেমন'এর সঙ্গে যদি বিচ্ছেদ ঘটানো যায় তবে মুখ বাঁকানোর ভঙ্গী আনে, যথা : যে মধুর বাক্য তোমার। "তেমন'এর সঙ্গ-বর্জিত "যেমন' শব্দটাও বদমেজাজি : যেমন তোমার বুদ্ধি।

এই ধরনেরই আর-একটা দৃষ্টান্ত মনে পড়ে : কোথাকার মানুষ হে। এ বাক্যটার চেহারা প্রশ্নেরই মতো, কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা রাখে না। এতে যে সংবাদ ঊহ্য আছে সে নিবাসঘটিত নয়, সে হচ্ছে লোকটার ধৃষ্টতার বা মূর্খতার পরিচয় নিয়ে। কোথাকার সাধুপুরুষ এসে জুটল : লোকটার সাধুতা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ হচ্ছে না।

"যেমতি' "তেমতি' পদ্যে আশ্রয় নিয়েছে। "সেইমতো' "এইমতো' এখনো টিঁকে আছে। কিন্তু "এর মতো' "তার মতো'র ব্যবহারটাই বেশি। করণকারকে রয়ে গেছে "কোনোমতে'। অথচ "কোনোমতো' বা "কোন্‌মতো' শব্দটা নেই।

"কেন' শব্দটা সর্বনাম। এর অর্থ প্রশ্নবাচক, এর রূপটা করণকারকের। ঘটনা ঘটল কেন : অর্থাৎ ঘটল কী কারণের দ্বারা। "কেনে বা' প্রাচীন কাব্যেও পড়েছি, গ্রাম্য লোকের মুখেও শোনা যায়।

কেন, কেন বা, কেনই বা। "লোকটা কেন কাঁদছে' এ একটা সাধারণ প্রশ্ন। "কেন বা কাঁদছে' বললে কান্নাটা যে ব্যর্থ বা অবোধ্য সেইটে বলা হল। কেন বা এলে বিদেশে : অর্থাৎ বিদেশে আসাটা নিষ্ফল। কেনই বা মরতে এখানে এলুম : এ হল পরিতাপের ধিক্কার। এর মধ্যে লক্ষ্য করবার বিষয় এই যে, এই প্রয়োগগুলির সবগুলোই অপ্রিয়তাব্যঞ্জক। কেন তিনি তিব্বতি পড়ছেন তা নিজেই জানেন না। : এ সহজ কথা। যেই বলা হল "কেনই বা তিনি তিব্বতি পড়তে বসলেন' অমনি বোঝা যায়, কাজটা সুবুদ্ধির মতো হয় না।

"কেন' শব্দের এক বর্গের শব্দ "যেন' "হেন'। "যেন' সাদৃশ্য বোঝাতে। "হেন' শব্দের প্রয়োগ বিশেষণে, যথা : হেন রূপ দেখি নাই কভু, হেন কাজ নেই যা সে করতে পারে না, সে-হেন লোকও তেড়ে এল। হেন কাজ = এমন কাজ। সে-হেন = তার মতো।

"যেন' শব্দটাতে বিদ্রূপের ভঙ্গী লাগানো চলে : যেন নবাব খাঞ্জে খাঁ, যেন আহ্লাদে পুতুল, যেন কাত্তিকটি, যেন ডানাকাটা পরী। বাংলায় বিদ্রূপের ভঙ্গীরীতি অত্যন্ত সুলভ।

"তেন' শব্দের ব্যবহার লোপ পেয়েছে। "হেন' শব্দের অর্থ "মতো' কিংবা "এই-মতো'। এর সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যায় "তেন' শব্দের অর্থ "সেইমতো'। "হেন-তেন' জোড়া শব্দ এখনো চলিত আছে। হেন-তেন কত কী ব'কে গেল : অর্থাৎ, ব'কল কখনো এরকম কখনো সেরকম, অসংলগ্ন বকুনি। প্রাচীন বাংলায় দেখেছি "যেন কন্যা তেন বর'। এখানে "যেন' শব্দের "যে-হেন' অর্থ।

"যেন' শব্দটা "হেন' শব্দের জুড়ি। পদাবলীতে পাওয়া গেছে, "যেহ্ন' (যে-হেন)। বোঝা যায় এই "হেন' শব্দের যোগেই "যেন' শব্দ চেহারা পেয়েছে। আধুনিক বাংলায় "যেন' শব্দটা তুলনা-উপমার কাজেই লাগে, কিন্তু পুরাতন বাংলায় তার অর্থের বিকৃতি হয় নি। তখন তার অর্থ ছিল "যেমন' : যেন যায় তেন আইসে, যেন রাজা তেন দেশ।

"হেন' শব্দটা রয়ে গেছে ভাষার মহদাশ্রয় পদ্যে। কিন্তু "সে' কিংবা "এ' শব্দের যোগে এখনো চলে, যেমন : সে-হেন লোক। এই "হেন' শব্দের যোগে ঐ "সে' শব্দে অক্ষমতা বা অসম্মানের আভাস দেয়। যেমন : সে-হেন লোক দৌড় মারলে। "হেন' শব্দের যোগে "এ' শব্দে অসামান্যতা বোঝায়, যেমন : এ-হেন লোক দেখা যায় না, এ-হেন দুর্দশাতেও মানুষ পড়ে।

"কেন'র সঙ্গে "যে' যোগ করলে পরিতাপ বা ভর্ৎসনার ভঙ্গী আসে, যেমন : কেন যে মরতে আসা, কেন যে এতগুলো পাস করলে। "কী করতে' শব্দটারও ঐ-রকম ঝোঁক, অর্থাৎ তাতে আছে ব্যর্থতার ক্ষোভ।

শুধু "কী' শব্দের মধ্যেও এই রকমের ভঙ্গী। এই কাজে ওর সঙ্গে যোগ দেয় ই অব্যয় : কী চেহারাই করেছ, কী কবিতাই লিখেছেন, কী সাধুগিরিই শিখেছ। ঐ "কী' এর সঙ্গে "বা' যোগ করলে ঝাঁজ আরও বাড়ে। "কী বা'কে বাঁকিয়ে "কীবে' করলে ভঙ্গীতে আরও বিদ্রূপ পৌঁছয়। ই'র সহযোগিতা বাদ দিলে "কী' বিশুদ্ধ বিস্ময় প্রকাশের কাজে লাগে : কী সুন্দর তার মুখ।

সম্মান খর্ব করবার বিশেষ প্রত্যয় বাংলা ভাষায় যথেষ্ট পাওয়া গেল, সর্বনামের প্রয়োগেও বক্রোক্তি দেখা গেছে। কিন্তু শ্রদ্ধা বা প্রশংসা-প্রকাশের প্রয়োজনে ভাষায় কেবল একটা বিশেষ ভঙ্গী আছে "আহা' অব্যয় শব্দটার যোগে, যেমন : আহা মানুষটি বড়ো ভালো। করুণা প্রকাশেও এর ব্যবহার আছে। অথচ "আহামরি' শব্দের পরিণামটা ভালো হয় নি। গোড়ায় এর উদ্দেশ্য ভালোই ছিল, এখন এ শব্দটার যে প্রকৃত স্বভাব সেইটাই গেছে বিপরীত হয়ে। এটা হয়েছে বিদ্রূপের বাহন। ওটাকে আরও একটু প্রশস্ত ক'রে হল "আহা ম'রে যাই'; এর ঝাঁজ আরও বেশি। পদে পদে বাংলায় এই বাঁকা ভঙ্গীটা এসে পড়ে : ভা-রি তো পণ্ডিত, ম-স্ত নবাব। এদের কণ্ঠস্বর উৎসাহে দীর্ঘকৃত হয়ে গাল পাড়ে যথার্থ মানেটাকে ডিঙিয়ে। হাঁদারাম ভোঁদারাম বোকারাম ভ্যাবাগঙ্গারাম শব্দগুলোর ব্যবহার চূড়ান্ত মূঢ়তা প্রকাশের জন্যে। কিন্তু "সুবুদ্ধিরাম' "সুপটুরাম' বলবার প্রয়োজনমাত্র ভাষা অনুভব করে না। সবচেয়ে অদ্ভুত এই যে "রাম' শব্দের সঙ্গেই যত বোকা বিশেষণের যোগ, "বোকা লক্ষ্ণণ' বলতে কারও রুচিই হয় না।

"কি' যেখানে অব্যয় সেখানে প্রশ্নের সংকেত। ঊহ্য বিশেষ্যের সহযোগে বিশেষণে ওর প্রয়োগ আছে। তুমি কী করছ : অর্থাৎ "কী কাজ' করছ। আর-একটা প্রয়োগ বিস্ময় বোঝাতে, যেমন : কী সুন্দর। পূর্বেই বলেছি তীক্ষ্ণধার স্বরবর্ণ ই সঙ্গে না থাকলে এর সৌজন্য বজায় থাকে। বিশেষণ-প্রয়োগে "কী', যথা : কী কাজে লাগবে জানি নে। "কী' বিশেষণ শব্দে অচেতন বা নির্বস্তুক বা অনির্দিষ্ট বোঝায় : ওর কী দশা হবে, কী হ'তে কী হল। বিকল্প বোঝাতে ওর প্রয়োগ আছে, যেমন : কী রাম কী শ্যাম কাউকেই বাদ দেওয়া যায় না। "কোন্‌' বিশেষণ জড় চেতন দুইয়েই লাগে।

সর্বনামের কর্মকারকে সাধারণত কে বিভক্তি : আমাকে তোমাকে। "সে'র বেলায় "তাকে' কিংবা "সেটিকে' "সেটাকে'।

বাংলা সর্বনাম করণকারকে একটা বিভক্তির উপরে আর-একটি চিহ্ন জোড়া হয়। বিভক্তিটা সম্বন্ধপদের, যেমন "আমার', ওতে জোড়া হয় "দ্বারা' শব্দ : আমার দ্বারা। আর-একটা শব্দচিহ্ন আছে "দিয়ে'। তার বেলায় মূলশব্দে লাগে কর্মকারকের বিভক্তি : আমাকে দিয়ে।

"কী' শব্দের কারণকারকের রূপ : কিসে, কিসে ক'রে, কী দিয়ে, কিসের দ্বারা। অধিকরণণেরও রূপ "কিসে', যথা : এ লেখাটা কিসে আছে। এ-সমস্তই একবচনের ও অজীববাচকের দৃষ্টান্ত, এরা বহুবচনে হবে : এগুলোকে দিয়ে, সেগুলোকে দিয়ে, কোন্‌গুলোকে দিয়ে। অসম্মানে মানুষের বেলা হয়, নচেৎ হয় : এদের দিয়ে, তাদের দিয়ে, ওদের দিয়ে।

সাধারণত বাংলায় বিশেষণপদের বহুবচনরূপ নেই। ওদের অধিকৃত বিশেষ্য শব্দগুলিতে বহুবচনের ব্যবস্থা করতে হয়, যথা : বুনো পশুদের, পিতলের ঘটিগুলোর। বলা বাহুল্য "ঘটিদের' হয় না, "পশুদের' হয়। রা এবং দের বিভক্তি জড়বাচক শব্দের অধিকারে নেই। তার পক্ষে গুলো শব্দই বৈধ। অথচ গুলো অপর পক্ষের ব্যবহারেও লাগে। কিন্তু পরিমাণবাচক "এত' "তত' "যত' "কত' বিশেষণের সঙ্গে বহুবচন-বিভক্তি গুলো যুক্ত হয়। তা ছাড়া "এ" "সে' "যে" "ও' "ঐ' "সেই' "কোন্‌' শব্দের সঙ্গে বহুবচনে কর্তৃপদে গুলো ও কর্মকারকে বা সম্বন্ধে দের যোগ করা হয়।

বাংলা সর্বনামশব্দ-প্রয়োগে একটা খটকার জায়গা আছে।

"আমাকে তোমাকে খাওয়াতে হবে' এমন কথা শোনা যায়। কে কাকে খাওয়াবে তর্কটা পরিষ্কার হয় না। এমন স্থলে যিনি খাওয়াবার কর্তা তাঁকে সম্বন্ধ-আসনে বসালে কথাটা পাকা হয়। আর সেটা যদি ক্রিয়াপদের পূর্বেই থাকে তা হলে দ্বিধা মেটে। "আমাকে তোমার খাওয়াতে হবে' বাক্যটা স্পষ্ট। গোল বাধে বহুবচনের বেলায়। কেননা বহুবচনে সম্বন্ধপদের দের আর কর্মকারকের দের একই চেহারার। এর একমাত্র উপায় কে বিভক্তি দ্বারা কর্মকারককে নিঃসংশয় করা। "আমাদেরকে তোমাদের খাওয়াতে হবে' বললে নিশ্চিন্ত মনে নিমন্ত্রণে যাওয়া যায়। সম্বন্ধকারকের চিহ্নে কর্মকারকের কাজ চালিয়ে নেওয়া ভাষার অমার্জনীয় ঢিলেমি।

৭ কার্তিক, ১৩৪৫ শান্তিনিকেতন

শিক্ষামন্ত্রী হারুন।


আমার স্কুলে, হারুন নামের এক বন্ধু ছিল... ওকে ক্লাসের সবাই মজা করে শিক্ষামন্ত্রী ডাকতো... কারণ সে সবাইকে উচিত শিক্ষা দিত
ওমুক জুনিয়র ছেলে বেয়াদপি করেছে? খালি হারুনরে বললেই হতো... থাপ্রায়ে থুপ্রায়ে সাইজ করে আসতো
অমুক মামু, ঝালমুড়ি কম দিয়েছে? হারুনরে বললেই হতো... যেয়ে তারেও শিক্ষা দিয়ে আসতো
মজার ব্যাপার তার মোবাইল নম্বর আমার কাছে “শিক্ষামন্ত্রী হারুন” নামে এখনও সেইভ করা আছে
মাঝে মাঝে কেউ চাঁদা চেয়ে ফোন করলে, হারুনকে এখনও ফোন দিয়ে বলি; ‘দোস্ত এরে একটু শিক্ষা দিয়ে দে’
...আমাদের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী সম্ভবত এরকম কিছু একটাই ভেবেছে নিজেকে
গতকাল সকালে এবং বিকালে, তার ২টা পৃথক পৃথক ডায়লগ দেখলাম;
(১) শিক্ষার মান আগে ছিলই না, এখন মানসম্পন্ন শিক্ষা হচ্ছে
(২) কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে “সেকেন্ড টাইম” পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগটা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে
... বুঝলাম না; ১ম পয়েন্ট সত্যি হলে তো আপনি নিজেই ধরা খেয়ে যাচ্ছেন। তারমানে আপনার মানসম্মত শিক্ষা নেই?
এখন এই পয়েন্ট কাউন্টার দেয়ার জন্য যদি বলেন, ‘হ্যা আমার সময় শিক্ষার মান ছিলো না কিন্তু আমি নিজ চেষ্টায় মানসম্মত শিক্ষা শিখে এসেছি’
... তাহলে তো ভাই আরো বড় প্রবলেম... কারণ, আপনি ২য় পয়েন্টে অন্য শিক্ষার্থীদের চেস্টা করার স্কোপটাও বন্ধ করে দিচ্ছেন
কেমন হলো না ব্যাপারটা?
শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে, এমন কোনও ‘উচিত সিদ্ধান্ত’ নিয়েন না যেন এই আগামী প্রজন্মকে বলতে হয়; I was born intelligent but the education system ruined me.

লেখক ঃ আরিফ আর হোসাইন

হাই আপেল, আর ইউ ভার্জিন?

ফেসবুকে প্রশ্ন প্রশ্ন খেলা চলতেসে। লাইক দিলেই প্রশ্ন। ভালো কথা। নতুন একটা প্রশ্নই নতুন দিগন্তের সূচনা করে। আমারেও কয়েকজন প্রশ্ন করেছে। প্রশ্নের ধরণ দেখেন
ফার্স্ট ক্রাশ কখন , ফেসবুকে কোন মেয়ের উপর ক্রাশ খাইছেন , লাইফে প্রথম কিস করছেন ইত্যাদি ইত্যাদি
বেশ মজার খেলা তাই না। হেল ইয়াহ। ক্রাশ মাশ কিস। এটা আরেকটা জিনিসও প্রকাশ করে। মানুষের পার্সোনাল আর সেক্স লাইফ নিয়ে বাঙ্গালীর অপার আগ্রহ। অমুকের ঘরে কি হইছে , অমুকের বৌ নাকি বন্ধ্যা , ওই মেয়ে ওইদিন রুম ডেট করছে, কার পর্দা ছেড়া ফাটা।

আমাদের ছেলে মেয়েদের সমস্ত আগ্রহ ওই ক্রাশ লাভ লাইফ
সেক্স লাইফ এইসব নিয়ে। জানিস শিউলি নাকি ভার্জিন না , তপু ইজ আ গ্রেট ফাকার , আল্লাহ জানিস না। সব আগ্রহ ঘুরে ফিরে ওই ভালোবাসা জি এফ ক্রাশ এইসবে আইসা থামে। ছেলে মেয়ে কেউ কারো চেয়ে কম বেহায়া না
প্রশ্ন আসলে দুই রকমের আছে। কামের প্রশ্ন আকামের প্রশ্ন। একদিন স্টিভ জবস নিজেকে প্রশ্ন করেন, এমন কোন মোবাইল কি বানানো যায়না , যেটা একদম বাটনলেস হবে। যার ফলাফল আজকের টাচস্ক্রিন স্মার্টফোন। যদিও জবস পুরোপুরি বাটনলেস করতে পারেননি। একটা বাটন রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে জবস একটাই আক্ষেপ করেন, আমার ব্যার্থতা আমি আইফোন কে পুরোপুরি বাটনলেস করতে পারেননি।

এইগুলারে বলে কামের প্রশ্ন। একটা প্রশ্ন একটা সৃষ্টির সূচনা করে। জাকারবার্গ প্রশ্ন করে , এমন কোন সেন্ট্রালাইজড কমিউনিকেশন বেজড ডাটাবেস তৈরি করা কি সম্ভব না যার মাধ্যমে একদল মানুষ ইন্টারনেটেই সোশাল যোগাযোগ করতে পারবে ?
যার ফলাফল আজকের ফেসবুক।

আর আমাদের প্রশ্ন হইল ক্রাশ কে, কিস কারে ,বেডে কে? ভারত আমেরিকার ছেলে মেয়েরা আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে , কেন মিল্কিওয়ে ,এর বাইরে কেন নয়? আমরা তখন মানুষের বাড়ির জানালায় কান পেতে প্রশ্ন করি ,এই শুনতো খাট নড়তেসে কিনা?

ভাগ্যিস আপেলটা নিউটনের সামনে পড়েছিল বলে আজ আমরা জানি গ্র্যাভিটি কি। আমাদের সামনে পড়লে প্রশ্ন করতাম ...হাই আপেল ,আর ইউ ভার্জিন?

লেখক ঃ ওয়ারিশ আজাদ নাফি

বাংলাভাষা পরিচয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৩)


আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্র যতই বেড়ে চলেছে ততই দেখতে পাচ্ছি, আমাদের চলতি ভাষার কারখানায় জোড়তোড়ের কৌশলগুলো অত্যন্ত দুর্বল। বিশেষ্যকে বিশেষণ বা ক্রিয়াপদে পরিণত করবার সহজ উপায় আমাদের ভাষায় নেই বললেই হয়। তাই বাংলা ভাষার আপন রীতিতে নতুন শব্দ বানানো প্রায় অসাধ্য। সংস্কৃত ভাষায় কতকগুলো টুকরো শব্দ আছে যেগুলোর স্বতন্ত্র কাজ নেই, তারা বাক্যের লাইন বদলিয়ে দেয়। রেলের রাস্তায় যেমন সিগ্‌ন্যাল, ভিন্ন দিকে ভিন্ন রঙের আলোয় তাদর ভিন্ন রকমের সংকেত, সংস্কৃত ব্যাকরণের উপসর্গগুলো শব্দের মাথায় চড়া সেইরকম সিগ্‌ন্যাল। কোনোটাতে আছে নিষেধ, কোনোটা দেখায় এগোবার পথ, কোনোটা বাইরের পথ, কোনোটা নীচের দিকে, কোনোটা উপরের দিকে, কোনোটা চার দিকে, কোনোটা ডাকে ফিরে আসতে। "গত' শব্দে আ উপসর্গ জুড়ে দিলে হয় "আগত', সেটা লক্ষ্য করায় কাছের দিক; নির্‌ জুড়ে দিলে হয় "নির্গত', দেখিয়ে দেয় বাইরের দিক; অনু জুড়ে দিলে হয় "অনুগত', দেখিয়ে দেয় পিছনের দিক; তেমনি "সংগত' "দুর্গত' "অপগত' প্রভৃতি শব্দে নানা দিকে তর্জনী চালানো। উপসর্গ থাকে সামনে, প্রত্যয় থাকে পিছনে। তারা আছে একই শব্দের নানা অর্থ বানাবার কাজে। নতুবা শব্দ তৈরি করবার বেলায় তাদের নইলে চলে না।

শব্দগড়নের কাজে বাংলাতেও কতকগুলো প্রত্যয় পাওয়া যায়। তার একটার দৃষ্টান্ত অন, যার থেকে হয়েছে : চলন বলন গড়ন ভাঙন। এরই সহকারী আ প্রত্যয়, যার থেকে পাওয়া যায় বিশেষ্য পদে : চলা বলা গড়া ভাঙা। এই প্রত্যয়টা বাংলায় সবচেয়ে সাধারণ, প্রায় সব ক্রিয়াতেই এদের জোড়া যায়। এই আ প্রত্যয় বিশেষণেও লাগে, যেমন : ঠেলা গাড়ি, ভাঙা রাস্তা। কিন্তু তি দিয়ে একটা প্রত্যয় আছে যেটা বিশেষভাবে বিশেষণেরই, যেমন : চলতি গাড়ি, কাটতি মাল, ঘাটতি ওজন। মুশকিল এই যে, সব জায়গাতেই কাজে লাগাতে পারি নে, কেন পারি নে তারও স্পষ্ট কৈফিয়ত পাওয়া যায় না। "গড়তি টেবিল' কিংবা "কথা-কইতি খোকা' বলতে মুখে বাধে, এর কোনো সংগত কারণ ছিল না। কাজ চালাবার জন্যে অন্য কোনো প্রত্যয় খুঁজতে হয়, সব সময়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। যে টেবিল গড়া চলছে তাকে সংস্কৃতে বোধ হয় "সংঘটমান' বলা চলে, কিন্তু বাংলায় কিছু হাৎড়ে পাই নে। যে খোকা কথা কয় ইএ প্রত্যয়ের সাহায্যে তাকে "কথা-কইয়ে' বলা যেতে পারে। অথচ ঐ প্রত্যয় দিয়ে "হাসিয়ে' "কাঁদিয়ে' বলা নিষিদ্ধ। কাঁদার বেলায় আর-এক প্রত্যয় খুঁজে পাওয়া যায় উনে, "কাঁদুনে'। কিন্তু "হাসুনে' বললে হাসির উদ্রেক হবে। অথচ "নাচুনে' চলতে পারে। "দৌড়ুনে' কথার দরকার আছে কিন্তু বলা হয় না, কেউ যদি সাহস ক'রে বলে খুশি হব। "দ্রুতধাবনশীল ঘোড়া'র চেয়ে "জোরে-দৌড়ুনে ঘোড়া' কানে ভালোই শোনায়। এই শব্দগুলোর প্রত্যয়টাকে ঠিক উনে বলা চলবে না; "নাচুনে' শব্দের গোড়া হচ্ছে : নাচন + ইয়া = নাচনিয়া। বাংলা ভাষার প্রকৃতি ই এবং আ'কে উ এবং এ কার দিয়েছে, হয়ে উঠেছে "নাচুনে'। এই কথাটা মনে ক'রে কৌতুক লাগে যে, দুটো অসদৃশ স্বরবর্ণকে ঠেলে দিয়ে কোথা থেকে উ এবং এ যায় জুটে।

সংস্কৃতে প্রত্যয় নিয়ম মেনে চলে, বাংলায় প্রায়ই ফাঁকি দেয়। বেসুর-বিশিষ্টকে বলি "বেসুরা' (চলতি উচ্চারণ "বেসুরো'); সুর-বিশিষ্টকে বলি নে "সুরা' বা "সুরো', আর কী বলি তাও তো ভেবে পাই নে। "সুরেলা গলা' হয়তো বলে থাকি জানি নে, অন্তত বলতে দোষ নেই। বালি-বিশিষ্টকে বলি "বালিয়া', অপভ্রংশে "বেলে'; কিন্তু চিনি-বিশিষ্টকে বলব না "চিনিয়া' বা "চিনে', চিনদেশজ বাদামকে "চিনে বাদাম' বলতে আপত্তি করি নে।

অনা প্রত্যয়-যোগে হয় "পাও' থেকে "পাওনা', "গাও' থেকে "গাওনা'। কিন্তু "ধাও' থেকে "ধাওনা' হয় না। অন্য প্রত্যয় যোগে হতে পারে "ধাওয়াই'। "কুট' থেকে হয় "কোটনা'; "ফুট' থেকে "ফুটকি', হয়, "ফোটনা' হয় না। "বাঁটা থেকে "বাঁটনা' হয়; "ছাঁটা' থেকে "ছাঁটাই' হবে, "ছাঁটনা' হবে না।

সংস্কৃতে মৎ প্রত্যয় কোথাও "মান' কোথাও "বান' হয়, কিন্তু তার নিয়ম পাকা। সেই নিয়ম মেনে যেখানে দরকার "মান' বা "বান' লাগিয়ে দেওয়া যায়। সংস্কৃতে "শক্তিমান' বলব, "ধনবান' বলব; বাংলায় একটাকে বলব "জোরালো' আর-একটাকে "টাকাওয়ালা'। অন্য ভাষাতেও ভাষার খেয়াল ক্ষণে ক্ষণে দেখা দেয়, কিন্তু এতটা বাড়াবাড়ি কম। যেমন ইংরেজিতে আছে : হেল্‌থি ওয়েল্‌থি প্লাকি লাকি ওয়েটি স্টিকি মিস্টি ফগি। কিন্তু "কারেজি' নয়, "কারেজিয়স'। তবু একটা নিয়ম পাওয়া যায়। এক সিলেব্‌ল্‌'এর হালকা কথায় প্রায় সর্বত্রই বিশিষ্ট অর্থে y লাগে, বড়ো মাত্রার কথায় এই প্রত্যয় খাটে না।

পূর্বেই বলেছি বাংলা ভাষাতেও প্রত্যয় আছে, কিন্তু তাদের প্রয়োগ সংকীর্ণ, আর তাদের নিয়ম ও ব্যতিক্রমে পাল্লা চলেছে, কে হারে কে জেতে।

সংস্কৃতে আছে ত প্রত্যয়-যুক্ত "বিকশিত পুষ্প', বাংলায় "ফোঁটা ফুল'। বুক-ফাটা কান্না, চলু-চেরা তর্ক, মন-মাতানো গান, নুয়ে-পড়া ডাল, কুলি-খাটানো ব্যবসা : এই দৃষ্টান্তগুলোতে পাওয়া যায় আ প্রত্যয়, আনো প্রত্যয়। কাজ চলে, কিন্তু এর চেয়ে আর-একটু জটিল হলে মুশকিল বাধে। "অচিন্তিতপূর্ব ঘটনা' খাস বাংলায় সহজে বলবার জো নেই।

কিন্তু এ কথাও জেনে রাখা ভালো, খাস বাংলায় এমন-সব বলবার ভঙ্গী আছে যা আর কোথাও পাওয়া যায় না। শব্দকে দ্বিগুণ করবার একটা কৌশল কথ্য বাংলায় চলতি, কোনো অর্থবান শব্দে তার ইশারা দেওয়া যায় না। মাঠ ধূধূ করছে, রৌদ্র করছে ঝাঁঝাঁ : মানেওয়ালা কথায় এর ব্যাখ্যা অসম্ভব। তার কারণ, অর্থের চেয়ে ধ্বনি সহজে মনে প্রবেশ করে : উস্‌খুস্‌ নিস্‌পিস্‌ ফ্যাল্‌ফ্যাল্‌ কাচুমাচু শব্দের ধরাবাঁধা অর্থ নেই। তাদের কাছ থেকে যেন উপরিপাওনা আদায় হয়, তাতে ব্যাকরণী টাঁকশালের ছাপ নেই।

বাংলার আর-একরকম শব্দদ্বৈত আছে তাদের মধ্যে অর্থের আভাস পাই, কিন্তু তারা যতটা বলে তার চেয়ে আঙুল দেখিয়ে দেয় বেশি। সংস্কৃতে আছে "পতনোন্মুখ', বাংলায় বলে "পড়ো-পড়ো'। সংস্কৃতে যা "আসন্ন' বাংলায় তা "হব-হব'। সেইরকম : গেল-গেল যায়-যায়। সংস্কৃতে যা "বাষ্পাকুল' বাংলায় তা "কাঁদো-কাঁদো। সংস্কৃতে বলে "অবরুদ্ধস্বরে', বাংলায় বলে "বাধো-বাধো গলায়'। বাংলায় ঐ কথাগুলোতে কেবল যে একটা ভাব পাওয়া যায় তা নয়, যেন ছবি পাই। একটা শ্লোক বলা যাক--

যাব-যাব করে, চরণ না সরে,
ফিরে-ফিরে চায় পিছে,
পড়ো-পড়ো জলে ভরো-ভরো চোখ
শুধু চেয়ে থাকে নীচে।

ঠিক এরকম একটুকরো রেখালেখ্য এই বাধো-বাধো ভাষাতেই বানানো চলে। বাংলায় বর্ণনার ছবিকে স্পষ্ট করবার জন্যেই এই-যে অস্পষ্ট ভাষার কায়দা, এর কথা বাংলা শব্দতত্ত্ব গ্রন্থে ধ্বন্যাত্মক শব্দের আলোচনায় আরও বিস্তারিত করে বলেছি।

বাংলায় কোনো কোনো প্রত্যয় অর্থগত ব্যবহার অতিক্রম ক'রে এইরকম ইঙ্গিতের দিকে পৌঁচেছে, তার উল্লেখ করা যাক : কিপ্‌টেমো ছিব্‌লেমো ছেলেমো জ্যাঠামো ঠ্যাঁটামো ফাজ্‌লেমো বিট্‌লেমো পেজোমো হ্যাংলামো বোকামো বাঁদ্‌রামো গোঁড়ামো মাৎলামো গুণ্ডামো।

সংস্কৃতের কোন্‌ প্রত্যয়ের সঙ্গে এর তুলনা করব? ত্ব প্রত্যয় দিয়ে "কিপ্‌টেমো'কে কিপ্‌টেত্ব' বলা যেতে পারে। কিন্তু ত্ব প্রত্যয় নির্বিকার, ভালো-মন্দ প্রিয়-অপ্রিয় জড়-অজড়ে ভেদ করে না। অথচ উপরের ফর্দটা দেখলেই বোঝা যাবে, শব্দগুলো একেবারেই ভদ্রজাতের নয়। গাল-বর্ষণের জন্যেই যেন পাঁকের পিণ্ড জমা করা হয়েচে। ঐ মো বা আমো প্রত্যয়ের যোগে "বাঁদরামো' বলি, কিন্তু "সিংহমো' বলি নে। কিপ্‌টেমো' হল, "দাতামো' হল না। "পেজোমো' বলা চলে অনায়াসে, কিন্তু "সেধোমো' (সাধুত্ব) বলতে বাধে। একটা প্রত্যয় দিয়ে বিশেষ ক'রে মনের ঝাল মেটাবার উপায় বোধ করি আর-কোনো ভাষাতেই নেই।

আর-একটা প্রত্যয় দেখো, পনা: বুড়োপনা ন্যাকাপনা ছিব্‌লেপনা আদুরেপনা গিন্নিপনা। সবগুলোর মধ্যেই কটাক্ষপাত। ব্যাকরণের প্রত্যয়ের যেরকম ভেদনির্বিচার হওয়া উচিত, এ একেবারেই তা নয়। চণ্ডীমণ্ডপে বসে বিরুদ্ধ দলকে খোঁচা দেবার জন্যই এগুলো যেন বিশেষ করে শান-দেওয়া।

আনা প্রত্যয়টা দেখো : বাবুআনা বিবিআনা সাহেবিআনা নবাবিআনা মুরুব্বিআনা গরিবিআনা। বলা বাহুল্য, এর ভাবখানা একেবারেই ভালো নয়। ঐ যে "গরিবিআনা' শব্দটা বলা হয়েছে, ওর মধ্যেও কপট অহংকারের ভাণ আছে। যদি বলা যায় "সাধুআনা' তা হলে বুঝতে হবে সেটা সত্যিকার সাধুত্ব নয়।

এই জাতের আর-একটা প্রত্যয় আছে, গিরি। তার সঙ্গে প্রায় "ফলাতে' কথার যোগ হয় : বাবুগিরি গুরুগিরি সাধুগিরি দাতাগিরি। এতে ভাণ করা, মিথ্যে অহংকার করা বোঝায়।

আরও একটা প্রত্যয় দেখা যাক, অনি বা আনি : বকুনি ধমকানি ছিঁচ্‌কাঁদুনি শাসানি হাঁপানি নাকানি-চোপানি-চোবানি জ্বলুনি কাঁপুনি মুখ-বাঁকানি খ্যাঁকানি লোক-হাসানি ফোঁপানি গ্যাঙানি ভ্যাঙানি ঘ্যাঙানি খিঁচুনি ছট্‌ফটানি কুট্‌কুটুনি ফোস্‌ফোঁসানি। এর সবগুলিই গাল-দেওয়া শব্দ নয়, কিন্তু অপ্রিয়। হাসটা তো ভালো জিনিস, কিন্তু, আনি প্রত্য দিয়ে হল "লোকহাসানি', হাসির গুণটা গেল বিগড়িয়ে। ছাঁকুনি নিড়ুনি বিনুনি চাটনি শব্দ বস্তুবাচক, সেইজন্যে তাদের মধ্যে নিন্দার ঝাঁজ প্রবেশ করতে পারে নি।

ইয়া [ বিকারে "এ' ] প্রত্যয়টা যখন বস্তুসূচক না হয়ে ভাবসূচক হয়, তখন তার ইঙ্গিতে কোথাও সুখের বা শ্রদ্ধার আভাস পাব না। যেমন : নড়্‌বড়ে নিড়্‌বিড়ে খিট্‌খিটে কট্‌মটে টন্‌টনে কন্‌কনে মিন্‌মিনে প্যান্‌পেনে ঘ্যান্‌ঘেনে ভ্যাজ্‌ভেজে ভ্যাদ্‌ভেদে ম্যাজ্‌মেজে ম্যাড়্‌মেড়ে জব্‌জবে খস্‌খসে জ্যাল্‌জেলে। সামান্য কয়েকটা ব্যতিক্রম আছে, "জ্বল্‌জ্বলে' "টুক্‌টুকে'; সংখ্যা বেশি নয়।

এবার দেখা যাক উআ'র বিকারে "ও' প্রত্যয় : ঘেয়ো বেতো জ্বোরো নুলো টেকো জেঁকো গুঁফো কুনো বুনো পেঁকো, ফোতো (বাবু), রোথো খেলো ভেতো, খেগো (পোকায়)। এগুলোও সুবিধের নয়; হয় তুচ্ছ নয় পীড়াকর। ভাত যে খায় সে নিন্দনীয় নয়, কিন্তু কাউকে যদি বলি "ভেতো' তবে তাকে সম্মান করা হয় না। জীবমাত্রই খাদ্যপদার্থ ব্যবহার করে, সেটা দোষের নয়; কিন্তু কোনো-একটা খাদ্যের সম্পর্কে কাউকে যদি বলা হয় "খেগো' তা হলে বুঝতে হবে সেই খাদ্য সম্বন্ধে অবজ্ঞার কারণ আছে। যথাস্থানে যথাপরিমাণে জল উপাদেয়, কিন্তু যাকে বলি "জোলো' তার মূল্য বা স্বাদের সম্বন্ধে অপবাদ দেওয়া হয়।

মন্দত্ব বোঝাতে সংস্কৃতে দুঃ ব'লে একটা উপসর্গ আছে, কু'ও যোগ করা যায়। কিন্তু বাংলায় এই প্রত্যয়গুলোতে যে কুৎসাবিশিষ্ট অবমাননা আছে অন্য কোনো ভাষায় বোধ হয় তা পাওয়া যায় না।

এবার স্ত্রীলিঙ্গ প্রত্যয়ের আলোচনা ক'রে প্রত্যয়ের পালা শেষ করা যাক।

খাপছাড়াভাবে সংস্কৃতের অনুসরণে নী ও ঈ প্রত্যয়ের যোগে স্ত্রীলিঙ্গ বোঝাবার রীতি বাংলায় আছে, কিন্তু তাকে নিয়ম বলা চলে না। সংস্কৃত ব্যাকরণকেও মেনে চলবার অভ্যেস তার নেই। সংস্কৃতে ব্যাঘ্রের স্ত্রী "ব্যাঘ্রী', বাংলায় সে "বাঘিনী'। সংস্কৃতে "সিংহী'ই স্ত্রীজাতীয় সিংহ, বাংলায় সে "সিংহিনী'। আকারযুক্ত স্ত্রীবাচক শব্দ সংস্কৃত থেকে বাংলা ধার নিয়েছে, যেমন "লতা'; কিন্তু স্ত্রীলিঙ্গে আ প্রত্যয় বাংলায় নেই; সংস্কৃতে আছে জানি, এত বেশি জানি যে, আকারান্ত শব্দ দেখবামাত্র তাকে নারীশ্রেণীয় বলে সন্দেহ করি। বাংলাদেশের মেয়েদের "সবিতা' নাম দেখে প্রায়ই আশঙ্কা হয় "পিতা'কে পাছে কেউ এই নিয়মে মাতা ব'লে গণ্য করে। মেয়েদের নামে "চন্দ্রমা' শব্দেরও ব্যবহার দেখেছি, আর মনে পড়ছে কোনো দুর্যোগে ভগবান চন্দ্রমা স্ত্রীছদ্মবেশে বাঙালির ঘরেও দেখা দিয়েছেন, বাঙালির কাব্যেও অবতীর্ণ হয়েছেন। এ দিকে "নীলিমা' "তনিমা' প্রভৃতি পুংলিঙ্গ শব্দ আকারের টানে মেয়েদের নামের সঙ্গে এক মালায় গাঁথা পড়ে। "নিভা' নামক একটা ছিন্নমুণ্ড শব্দ "শরচ্চন্দ্রনিভাননা' থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যুক্ত হয়েছে বাঙালি মেয়েদের নামমালায় আকারের টিকিট দেখিয়ে।

স্ত্রীলিঙ্গের কোনো একটি বা একাধিক প্রত্যয় যদি নির্বিশেষে বা বাঁধা নিয়মে ভাষায় খাটত তা হলে একটা শৃঙ্খলা থাকত, কিন্তু সে সুযোগ ঘটে নি। বাংলায় "উট' হয়েতো "উটী', কিন্তু "মোষ' হয় না "মোষী', এমন-কি "মোষীনী'ও না--কী হয় বলতে পারি নে, বোধ করি "মাদী মোষ'। "হাতি' সম্বন্ধেও ঐ এক কথা, "নাতনী' বলি কিন্তু "হাতিনী' বলি নে। উট-হাতির চেয়ে কুকুর-বিড়াল পরিচিত জীব, "কুকুরী' "বিড়ালী' বললেই চলত, কিংবা "কুকুরনী' "বিড়ালনী'। বলা হয় না। মানুষ সম্বন্ধেও কেমন একটা ইতস্তত আছে-- "খোট্টানি' "উড়েনি' ব'লে থাকি, কিন্তু "পাঞ্জাবিনী' "শিখিনী' "মগিনী' বলি নে; "মাদ্রাজিনী'ও তদ্রূপ; "বাঙালিনী' বলি নে, "কাঙালিনী' বলে থাকি।

আত্মীয়তা সম্বন্ধেও নামগুলিতে স্ত্রী প্রত্যয়ের ছাপ আছে : দিদি মাসি পিসি শ্যালী শাশুড়ি ভাইঝি বোনঝি। "ননদ' শব্দে ইনী যোগ না করলেও তার প্রভাব সম্পূর্ণ থেকে যায়। জা শ্যালাজ প্রভৃতি শব্দে দীর্ঘ ঈকারের সমাগম নেই।

জাতঘটিত ব্যাবসাঘটিত নামে নী ইনী যথেষ্ট চলে : বাম্‌নী কায়েতনী। অন্য জাত সম্বন্ধে সন্দেহ আছে। "বদ্দিনী' কখনো শুনি নি। "বাগদিনী' চলে, "ডোমনী' "হাড়িনী'ও শুনেছি, "সাঁওতালনী' বললে খটকা লাগে না। পুরুতনী ধোবানী নাপতিনী কামারনী কুমোরনী তাঁতিনী : সর্বদাই ব্যবহার হয়। অথচ শেলাই ব্যাবসা ধরলেও মেয়েরা "দর্জিনী' উপাধি পাবে কি না সন্দেহ। যা হোক মোটের উপর বাংলায় স্ত্রীলিঙ্গে নী ইনী প্রত্যয়টারই চল বেশি।

একটা বিষয়ে বাংলাকে বাহাদুরি দিতে হবে। য়ুরোপীয় অনেক ভাষায়, তা ছাড়া হিন্দি হিন্দুস্থানি গুজরাটি মারাঠিতে, কাল্পনিক খেয়ালে বা স্বরবর্ণের বিশেষত্ব নিয়ে লিঙ্গভেদপ্রথা চলেছে। ভাষার এই অসংগত ব্যবহার বিদেশীদের পক্ষে বিষম সংকটের। বাংলা এ সম্বন্ধে বাস্তবকে মানে। বাংলায় কোনোদিন ঘুড়ি উড্ডীয়মানা হবে না, কিংবা বিজ্ঞাপনে নির্মলা চিনির পাকে সুমধুরা রসগোল্লার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করবে না। কিংবা শুশ্রূষার কাজে দারুণা মাথাধরায় বরফশীতলা জলপটির প্রয়োগ-সম্ভাবনা নেই।

এইখানে একটা কথা জানিয়ে রাখি। সংস্কৃত ভাষার নিয়মে বাংলার স্ত্রীলিঙ্গ প্রত্যয়ে এবং অন্যত্র দীর্ঘ ঈকার বা ন'এ দীর্ঘ ঈকার মানবার যোগ্য নয়। খাঁটি বাংলাকে বাংলা বলেই স্বীকার করতে যেন লজ্জা না করি, প্রাচীন প্রাকৃত ভাষা যেমন আপন সত্য পরিচয় দিতে লজ্জা করে নি। অভ্যাসের দোষে সম্পূর্ণ পারব না, কিন্তু লিঙ্গভেদসূচক প্রত্যয়ে সংস্কৃত ব্যাকরণ কতকটা স্বীকার করার দ্বারা তার ব্যাভিচারটাকেই পদে পদে ঘোষণা করা হয়। তার চেয়ে ব্যাকরণের এই-সকল স্বেচ্ছাচার বাংলা ভাষারই প্রকৃতিগত এই কথাটা স্বীকার করে নিয়ে যেখানে পারি সেখানে খাঁটি বাংলা উচ্চারণের একমাত্র হ্রস্ব ইকারকে মানব। "ইংরেজি' বা "মুসলমানি' শব্দে যে ই-প্রত্যয় আছে সেটা যে সংস্কৃত নয়, তা জানাবার জন্যই অসংকোচ হ্রস্ব ইকার ব্যবহার করা উচিত। ওটাকে ইন্‌-ভাগান্ত গণ্য করলে কোন্‌ দিন কোনো পণ্ডিতাভিমানী লেখক "মুসলমানিনী' কায়দা বা "ইংরেজিনী' রাষ্ট্রনীতি বলতে গৌরব বোধ করবেন এমন আশঙ্কা থেকে যায়।

৭ কার্তিক, ১৩৪৫ শান্তিনিকেতন