আকাশ ভর্তি জোছনা..


ঘরে কেরাসিন নাই...কারেন্ট? হেইডা তো বড়োলোকের জিনিস... কারেন্ট না থাকলেই তো ভালা... কারেন্টের বিল দিতে অয়না। কারেন্ট থাকলে বাতি টা জ্বালাইতে ইচ্ছা করে।

ওহ যেইডা কইতাসিলাম, ঘরে কেরাসিন নাই... কুপি হারিকেন কিচ্ছু জ্বালাইতে পাড়তাসিনা। কয়দিন পরে আমার পরীক্ষা...মেট্টিক পরীক্ষা... বাজানের ভ্যানের চাক্কা বাইক্কা গেসে, টেম্পুর লগে বাড়ি লাগসিলো। বাজানে হাডুত দুক পাইসে। নাইলে কি আর ঘরে একডু কেরাসিন থাহেনা?
দিনের সময় তো হামিদ আলীর ধান ভাঙ্গার কলে কাম করি, আজকা ৩০ টেকা পাইসি। ১ কেজি চাইল কিন্না আন্সি... মায় আজকা ৩ দিন পড়ে ভাত রানসে... ভাত খাইলে ঘুম আয়ে। মায় কইসে ভাত কম খাইলে নাকি বুদ্ধি বারে। আমি মারে কইসিলাম হ মা হের লাইগাই আমি টেস্ট পরীক্ষায় ফাস্ট হইসি। তয় আমার ভাত খাইতে ভাল্লাগে, কিন্তু মা'রে কই না... আমি জানি মায় কেন ভাত কম খাইতে কয়।

আইজকা যদি চান্নি রাইত হইতো তাইলে তো উডানে চাডি বিছাইয়া পড়তে বইতাম। আমার মাইঝে মইধ্যে মনে হয় আল্লা'র লগে কতা কই। আল্লা তুমি না সব হুনো? তাইলে আইজকা একটু চান্নি দিয়া দেও না... কেরাসিন তো চাইনাই... তুমি তো আর আকাশ থিকা টেকা ছিডাইবানা, একটু চান্নি ছিডাও... পড়তে বইতাম একডু...

মেট্টিক পরীক্ষার পড়ে আমি নাকি আর পড়তে পারুম না... তয় বাজান কইসে রক্ত বেইচ্চা হইলেও আমারে পড়াইবো। আমি বাজান রে রক্ত বেচতে দিমু না...
এতো রাইতে আবার কেডা আইলো? বাজান? তুমি কই গেসিলা? হাডুত দুক নিয়া আবার বাজারে গেসিলা চা খাইতে?
হায় হায় বাজান তুমি কেরাসিন লইয়া আইসো? আবার কর্জ করসো, না? বাজান তোমারে লইয়া আর পারিনা, একদিন না পড়লে কিসু অয়না...
ছেলেটি পড়তে বসে, আমি চোখে পানি নিয়ে, ঘর ভর্তি কারেন্ট নিয়ে বিশাল কম্পিউটার স্ক্রীনে টাইপ করে যাই...
বাইরে জোছনাও আছে... আকাশ ভর্তি জোছনা..

দিপু জামান
[ ৮-ই অক্টোবর, ২০১৩, ইস্ট এলমহারস্ট, নিউ ইয়র্ক ]