মাঝরাতে যখন আমার এলাকায় কারেন্ট এসেছে তখন পুরো এলাকা হৈ হৈ করে উঠেছে
রাজাবাজারে শুনলাম খুশিতে মাঝরাতেই আনন্দমিছিল বের হয়ে গিয়েছিল
বাড্ডায় ছেলেপেলে খুশিতে পটকা ফুটিয়েছে... গাজীপুরে এক উত্তেজিত বান্দা খুশিতে তারাবাতি জ্বালাতে যেয়ে তার লুঙ্গি জ্বালিয়ে ফেলেছে
সে এখন গাজীপুর সদর হাসপাতালে উপুত হয়ে হাসিহাসি মুখ করে শুয়ে আছে
পুরো দেশ ১০ ঘন্টা অন্ধকারে ছিলো... এই কাহিনী বাইরের যে কোনও দেশে ঘটলে, নিমিষেই দাঙ্গা লেগে যেত
আমেরিকার মতো দেশে এতক্ষণ কারেন্ট না থাকলে তো দোকানের শাটার ভেঙ্গে লুটপাট শুরু হয়ে যেত
আমাদের কোথাও কিন্তু এরকম হয়নি ... ১/২ টা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ... তারমধ্যে আবার গাজীপুরের ঘটনাটাও আছে
এই হলাম আমরা... এই হলাম সুখি আমরা
গতকাল মোমবাতি কিনতে গিয়েছি; যে মোমবাতির দাম ১০ টাকা, সেটা দোকানদার ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে চাইলো ১০০ টাকা
চোখ গরম করে টাকা দিতে যাব এমন সময় টুসস করে কারেন্ট এসে পড়লো
বেচারা পারলে দৌড় দেয় ভয়ে
নিজের দোকান... নিজের মোমবাতি... তাও সে কাচুমাচু করছে; এক পর্যায়ে বললো, ‘আইচ্ছা পার পিচ ৫০ টাকা কম দিলেও হইবো’
... এই হলাম আমরা
আমাদের দৌড় এততুকুই ... এই মোমবাতির দাম বাড়ানো পর্যন্তই
দেশ যখন অন্ধকারে, তখন বিরোধীদল ভেবেছে, “সাব্বাস পাইলাম একটা ইস্যু... সরকার নাড়ায়ে দেয়ার মতো ইস্যু”
ওদিকে সরকারিদল শিওর জনগণকে ভয় পাওয়ার থেকে বিরোধীদলকেই বেশী ভয় পেয়েছে
দুই দলের কেউই, গাজীপুরের সেই মান্নানদের কথা ভাবেনি
অথচ এরাই, ঘামতে থাকা অবস্থাতেই বিদ্যুৎ আসায় এমনন জোরে চিৎকার দিয়েছে যেন মনে হয় বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছে
যে দেশে এতো সুন্দর মানুষেরা থাকে, সে দেশের তো এমন অবস্থা হবার কথা না... উহু
একটা ন্যাশনাল ক্রাইসিসে, দল মত নির্বিশেষ সবার ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা
... কিন্তু এটা, ‘কথা’ পর্যন্তই
একটা ন্যাশনাল ইস্যুতে দুইদল এক হতে পারে না... সেটা তিস্তার পানি বন্টন ইস্যু হোক বা রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প হোক
কেন, কাল বিরোধীদল যদি এসে বলতো; “আমাদের দলে যারা জ্বালানী এক্সপার্ট আছে তাদের এখনইই পাঠাচ্ছি আপনাদের সাহায্য করতে” ... তাহলে কি তাদের ভোট নিমিষে বেড়ে যেত না?
কেন, কাল যদি সরকারী দলের একজন পলিসিমেকার এতবড় ঘটনার পর সাথে সাথে পদত্যাগ করতো... তাহলে কি তার দল মানুষের কাছে আরো আস্থাভাজন হতো না?
আমি বুঝি না... যে সিম্পল বিষয়গুলো আমরা বুঝি, আপনারা কেন বুঝেন না
হ্যা আমাদের দেশের জনগন প্রচন্ড সিম্পল... কিন্তু প্লিজ এটাকে আপনারা আমাদের উইকনেস হিসেবে নিবেন না
এখন যতই ড্যাম কেয়ার ভাব নেন; যেদিন মোমবাতিওয়ালার মতো টাইমিং এর মারপ্যাঁচে পড়বেন, সেদিন এই মান্নান্রাই আপনাকে হাসিমুখে হাতে কেরোসিন নিয়ে দৌড়ানি দিবে
১টা ২টা মান্নান না ... লক্ষ লক্ষ মান্নান
যারা আপনার ক্রেডিটে নিজের লুঙ্গি পোড়াতে পারে ... সেই তারাই কিন্তু আবার নিজের লুঙ্গি বাঁচানোর জন্য, আপনাকেও পোড়াতে পারবে।
লেখক ঃ আরিফ আর হোসাইন